
জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই মহান সাধকের জীবন-দর্শন ও মানস নিয়ে বহুমাত্রিক আলোচনা দীর্ঘদিন থেকে অনুভুত হচ্ছিল।হযরত গাউসুল আ'যম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ শাহ মাইজভাণ্ডারী কঃ জীবন ও কৃতি সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে তথ্যস্বল্পতা দেখে পল্লী কবি জসীম উদ্দিনের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য।তিনি বলেছিলেন,"শাহজালাল পীরের মতই মাইজভান্ডারের সুপ্রসিদ্ধ পীর জনাব আহমদুল্লাহ সাহেবের জীবনের প্রকৃত মহিমা জানান যায় না।......তাঁহার জীবনের (অনেক) মহত্বপূর্ণ ঘটনা......আড়ালে পড়িয়াছে।......এই পীর সাহেবের জীবনে যে অনেক আত্মত্যাগ,অনেক সাধনা,সহৃদয় প্রবণতা ছিল,তাহা কল্পনা করিয়ে পারি।" [মুর্শিদা গানঃ জসীম উদ্দিনঃ বাংলা একাডেমি,ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত] বলা বাহুল্য,হযরত সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী কঃ এগিয়ে না এলে হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী কঃ'র জীবন ও কৃতির বর্তমান তথ্যাবলী ও দুর্লভ হয়ে পড়তো। শাহানশাহ সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী কঃ এর স্মৃতি,জীবন ও তথ্যাবলি যেন হারিয়ে না যায় এজন্য স্মারক গ্রন্থ মালা নামে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য ও গবেষণামূলক সিরিজ প্রকাশনার একটা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল এতে 'রাহেবারে আলম' সাজ্জাদানশীলে 'গাউসিয়া হক মঞ্জিল' সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মাইজভাণ্ডারী মাঃ জিঃ আঃ এতে সম্মতি ও উৎসাহ প্রদান করেছিলেন।ফলশ্রুতিতে গবেষণামূলক কাজের আয়োজন যে অধিক সময় ও আয়েস সাপেক্ষ ছিল,তা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না।
শাহানশাহ সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী কঃ গাউসুল আ'যম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ শাহ মাইজভাণ্ডারী কঃ এর সুনজরে পড়েন,যখন তিনি বি এ পরিক্ষা ত্যাগ দিয়ে বাড়ি ফেরত আসেন।তখন আহার নিদ্রা সবি ত্যাগ দেন।অনেক প্রকার চিকিৎসা করা হয় তবুও কোন পরিবর্তন না দেখে সবাই ব্যাকুল হয়।উনার সম্মানিত পিতা সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী কঃ চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়েন।বড় সন্তানের এরুপ অবস্থা কোন ওষুধ খুঁজে পাচ্ছেন না।এক রাতে তিনি চিন্তিত অবস্থায় বিশ্রাম করছেন,হঠাৎ দেখতে পেলেন,হযরত কেবলা (গাউসুল আযম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী কঃ) উনার পাশে এসে বলছেন," আপনি উদগ্রীব হয়েছেন কেন? আমার জুব্বাটি তাঁর গায়ের উপর ঢেলে দিন"।এমত দর্শনে তিনি তাড়াতাড়ি হযরতের স্মৃতি কামরা থেকে জুব্বাটি তালাশ করে নিলেন এবং জুব্বাটি ছেলের গায়ে ঢেলে দিয়ে তিনি আপন হুজরায় বিশ্রাম করতে আসলেন।একটু তন্দ্রা এসেছে,এমতাবস্থায় ছেলে এসে উনার হুজরার দরজা খুজলতে চেষ্টা করলেন।তিনি উঠে দরজা খুলে দিলেন।ছেলে উনার পাশে বিছানায় শুয়ে পড়লেন।উনার এমন নিদ্রা আসলো যে ,সারারাত গত হয়ে পর দিনের সন্ধ্যায় অবধি ঘুমিয়ে রইলেন।ঘুম হতে উঠে দেখলেন,ছেলের অবস্থা প্রায় শান্ত,ছেলেকে স্লান ও আহারান্তে পুনঃবিশ্রাম করতে দিলেন।এবারও তিনি সারারাত ও পরদিনের প্রায় ৯টা অবধি ঘুমে বিভোর হয়ে রইলেন।সেদিন হতে দেখা গেল,ছেলে সম্পূর্ণ সুস্থ ও শান্ত হয়ে উঠেছেন।
আধ্যাত্মিক জীবন ও রিয়াজতঃ সাধারণ ও স্বাভাবিক জীবনের বাইরে উনার জীবন ধারা প্রবাহিত হয়েছিল ভিন্নতর পথে।উনার আচার-আচরণ,কথাবার্তা,কাজকর্ম সব ছিল ব্যাতিক্রমধর্মী।সাধারণ মানুষ ব্যতিক্রম পছন্দ করেন।প্রথম দিকে তাই উনার আচরণের রহস্য বুঝতে পারে নি অনেকেই।জৈবিক প্রেরণাজাত সকল প্রকার চাহিদা ও অপক্ষমতা নির্মূল করার লক্ষ্যে হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী কঃ কঠোর সাধনায় নিমগ্ন হলেন।পৌষের কনকনে শীত।ঠান্ডায় মানুষ লেপ কাঁথার ভিতরেও টিকতে পারে না।পৌষ-মাঘের শীতে আন্দর বাড়ির পুকুরে ঘন্টার পর ঘন্টা,কখনো একটানা দুইদিনও পানিতে আকন্ঠ পানিতে ডুবে থাকতেন।বাড়ির পশ্চিমে লোহার খালেও কখনো নাক দেখিয়ে ডুবে থেকে সময় কাটিয়েছেন।অধিক ঠান্ডায় শরির ফ্যাকাসে সাদা হয়ে যেতো।পর পর কয়েকটি শীত ঋতু তিনি এমনি কষ্টকর সাধনায় কাটিয়েছেন।তিনি কাউকে কিছু না বলে বিভিন্ন সময় চট্টগ্রাম শহরস্থ বিভিন্ন জায়গায় চলে যেতেন।তিনি বহুবার বাড়ি থেকে পঁচিশ মাইল দূরত্বের চট্টগ্রাম সহরে হেঁটে আসা-যাওয়া করেছেন।একবার তিনি ৫/৬ দিন নিখোঁজ হয়ে যান। ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের জংগাকীর্ণ টিলা থেকে খবর পেয়ে উনাকে বাড়িতে আনা হয়,তিনি কখনো কখনো ৩/৪ দিন অনাহারে থাকতেন।কখনো এক পায়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতেন।একবার নিজ কক্ষের দরজা জানালা বন্ধ করে দীর্ঘ আঠারো দিন অনাহারে কাটিয়েছেন রিয়াজতে।কিছুদিন হাতের কাছে যা পেতেন তা আগুনে পুড়ে ফেলতেন।ঘরের লেপ,তোষক,কাপড়-চোপড় সব কিছু পোড়াতেন এবং বসে বসে দেখতেন।কেউ বাধা দিলে প্রহার করতেন।