শাহানশাহ বাবাজানের জীবনের অনেক কেরামত প্রসিদ্ধ এবং অবাক করা,তারমধ্যে একটি অন্যতম কেরামত তুলে ধরছি;" তেলবিহিন গাড়ি চলে"
চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ির আজিমনগরের নাছির আহমদ দীর্ঘ তিনবছর ব্যাপী হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারীর গাড়ির ড্রাইভার ছিলেন।তিনি বলেন,বিভিন্ন সময় হক ভান্ডারি নির্দেশে তেল ছাড়া শত শত মাইল গাড়ি চালনা করেছি।একবার পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির ময়ুলখিলস্থ উনার কৃষি খামারে যাচ্ছিলাম।মাইজভান্ডার দরবার শরিফ থেকে ৭ মেইল দূরে বিবিরহাট পেরিয়ে তেল ফুরিয়ে যায়।উনাকে তেলের কথা জানানো হলে তিনি বলেন," এমনে চলবে,তুমি চালিয়ে যাও"। উনার নির্দেশ মতো গাড়ি চালাতে শুরু করলাম।তেলশূন্য জীপটা চালিয়ে সেখান থেকে ৮ মেইল দূরে ধুরং নবি পার হতে তিনি বললেন," এখান থেকে পেট্রোল ট্যাংকে পানি ভরে নাও"।আমি নির্দেশ পালন করলাম।সে পানিতেই গাড়ি ৩০ মেইল চালালাম।কোন অসুবিধে হয় নি।তবে কি পানিতে গাড়ি চলার কোন শক্তি আছে?
আরেকবার কক্সবাজার যেতে বললে জানালাম,ট্যাংকে মাত্র এক গ্যালন তেল আছে,তেল নিতে হবে।তিনি বললেন-"চালাও"।তখন তিনি অধিক জজব হালে ছিলেন।ভয়ে ভয়ে স্টার্ট করে চালাতে লাগলাম।পথিমধ্যে কোন তেল না নিয়ে আসা-যাওয়া ১৯২ মেইল দীর্ঘ পথ গাড়ি নির্বিঘ্নে চলেছে।এ ধরণের আরো অনেক ঘটনা রয়েছে।একবার কারযোগে ১৪ গ্যালন তেলের সাহায্যে সাড়ে পাচশত মাইল ভ্রমণ করেছেন।আরেকবার মাত্র ১ গ্যালন তেলের সাহায্যে চট্টগ্রাম শহর থেকে কক্সবাজারে আসা যাওয়া করেছিলেন।'
মুক্তি দিশারী হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী কঃ ,আমরা সকলেই জানি;" কিরামাতুল আউলিয়া হাক্কুন" আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল দঃ এর নৈকট্য লাভ করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই আলাহর প্রিয় বান্দাগণের সান্নিধ্যে থাকতে হবে,কেননা আল্লাহতা'য়ালা পবিত্র কুরানে ইরশাদ করেছেন,-" হে ঈমানদার গণ! আল্লাহকে ভয় করতে থাক এবং প্রতিপালকের প্রতি ওসিলা তালাশ কর এবং তাঁর পথে জিহাদ কর,যাতে করে তোমরা সফলকাম হও (সুরা মায়েদাঃ পারাঃ৫ রুকুঃ৬) এ আয়াতে করিমা থেকে বুঝা গেল যে,আমলসমূহ ছাড়াও আল্লাহতা'য়ার প্রিয় বান্দাগণের ওসিলা তালাশ করা অপরিহার্য।
‘‘রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম গাউসিয়াতের দুই তাজের একটি হযরত আবদুল কাদের জিলানী (ক.), অন্যটি হযরত মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.) কে দিয়েছেন, যেটি পরে আমি পেয়েছি’’ – শাহানশাহ বাবাজানের কালাম
গাউসুল আ'যম হজরত মাওলানা শাহসুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ) এর তরিকত ও বেলায়তের যোগ্য উত্তরাধিকারী হলেন বিশ্বঅলি শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ)।
শাহানশাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ) উনার সমসাময়িক কোন অলি আল্লাহর কাছ থেকে ফয়েজ লাভ পূর্বক বিশ্বঅলি পদে পদবান হন নাই। অছিয়ে গাউসুল আ'যম হজরত সৈয়দ দেলাওয়ার হোসাইন মাইজভাণ্ডারী (কঃ) এর কাছে গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (কঃ) যে আমানত শাহানশাহ বাবাজানের জন্য রেখেছিলেন, ঐ আমানত গ্রহন করেই শাহানশাহ বাবাজান বিশ্বঅলি’র পদে পদবান হন।
বিশ্বঅলি’র পদে পদবান হওয়ার স্বপক্ষে হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ও হযরত বাবা ভাণ্ডারী (কঃ) এর পবিত্র কালাম ও ঘটনা সমূহ, যা শাহানশাহ বাবাজানের জীবনী শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে।
১) হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (কঃ) এর জন্মের ১০০ বছর পর ১৯২৮ সালে অছি-এ- গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (কঃ) এর সংসারে তিন শাহজাদীর আগমনের পর আগমন ঘটে প্রথম শাহজাদার। সপ্তম দিবসে আকিকা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় এবং শাহজাদার নাম রাখা হয় “সৈয়দ বদিউর রহমান”। এই অনুষ্ঠানের পর শাহজাদার পিতাকে স্বপ্নে হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (কঃ) বলেন,
“শিশুর নাম রাখুন জিয়াউল হক”
পরদিন পুনঃ অনুষ্ঠান আয়োজন করে দুটো গরু জবেহ করে শাহজাদার নাম রাখা হয় জিয়াউল হক। জিয়া শব্দের অর্থ আলো এবং হক শব্দের অর্থ সত্য। সত্যের আলো বহনকারী দূত সৈয়দ জিয়াউল হক। সত্যের আলোর প্রকাশস্থল সৈয়দ জিয়াউল হক। সত্যের আরেক নাম পরম করুণাময় রাব্বুল আলামীন।
[“মিরাজী বার্তাবাহী মহাদূত” অধ্যায়ের আলোকে]
২) একুশ দিনের শিশু শাহজাদা সৈয়দ জিয়াউল হক অসুস্থ, মৃত প্রায়। শাহজাদার মাতা শোকে পাথর হয়ে গেছেন, সবাই উদ্বিগ্ন। এমন সময় উপস্থিত হলেন শাহাজাদার বড় নানী সৈয়দা রাবেয়া খাতুন। শাহজাদার এমন অবস্থা দেখে শাহজাদাকে কোলে নিয়ে শাহজাদার পিতা হযরত অছি-এ- গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (কঃ) এর কাছে গিয়ে বলেন, “চলুন তো বাবা মাওলানা সাহেবের (হযরত বাবা ভান্ডারী কঃ) নিকট গিয়ে দেখি, কিছু হয় কিনা”। তিনি শাহজাদার পিতা উত্তর দেন, “পুত্রের জীবন ভিক্ষার মত সামান্য কিছুর জন্য আমি তাঁর নিকট যাব না। ইচ্ছা হলে আপনি যেতে পারেন”। তখন সময়টা ছিল সকাল বেলা। হযরত বাবা ভান্ডারী (কঃ) তখন গাউসিয়া আহমদিয়া মনজিলের দক্ষিণে পুরান হুজরায় থাকতেন। শাহজাদাকে কোলে নিয়ে সৈয়দা রাবেয়া খাতুন উপস্থিত হলেন হযরত বাবা ভাণ্ডারী (কঃ) কদমে। তিনি আরজ করেন, “হযরতের বংশের বাতি নিভে যায় আর আপনি চাদর মুড়ি দিয়ে আরাম করছেন? আপনি না লক্ষ লোকের হাজত রওয়া মুশকিল কোশা! আপনার সম্মুখে গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর বংশের বাতি নিভে গেলে তাঁকে কি জবাব দেবেন? হাশর ময়দানে আল্লাহ্ ও রাসুলকে কি করে মুখ দেখাবেন?” হযরত বাবা ভাণ্ডারী (কঃ) এর কোন সাড়া না পেয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠ তিনি আবার বলেন, “লক্ষ লক্ষ কাঁটা বিঁধে যখন পাহাড় থেকে এসেছিলেন, আমিই তুলেছিলাম সব কাঁটা। গরম পানিতে রক্ত-পুঁজ ধুয়ে সেবা শুশ্রুষায় সুস্থ করেছিলাম। প্রতিদান কিছুই তো চাই নাই। এখন আমার দাবি এই ছেলের জীবন ফিরিয়ে দিতে হবে”। দয়া প্রার্থীর এমন আবেদন সাড়া দিয়ে হযরত বাবা ভাণ্ডারী (কঃ) চাদর সরিয়ে ডান হাত বাড়ালেন পানি ঢালার জন্য। শাহজাদাকেকে জলধারায় রেখে সাত কলসী পানি ঢালার পর ইশারা করেন পানি ঢালা বন্ধ করতে। কিন্তু শাহজাদার এখনো নিশ্চুপ হয়ে আছেন। এরপর হযরত বাবা ভাণ্ডারী (কঃ) পবিত্র হাত মোবারক নিংড়ে দু’তিন ফোঁটা পানি শাহজাদার মুখে দিলেন। শাহজাদা আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালেন। সৈয়দা রাবেয়া খাতুনেরর চোখে নেমে আসে আনন্দ অশ্রুধারা। অবরুদ্ধ কণ্ঠে একবার শুধু বলেন, “আল্লাহর হাজার শোকর”। [“আল্লাহর হাজার শোকর” অধ্যায়ের আলোকে]
৩) তাহার বড় সন্তান শাহ ছৈয়দ মৌলভী জেয়াউল হক ছাহেব বর্ত্তমানে যিনি আধ্যাত্মিক প্রেরণায় বিভোর আছেন। বি এ পরীক্ষা দেওয়ার সময় তিনি হজরত বাবাজান কেবলা কাবার আধ্যাত্মিক সুনজরে পড়েন। প্রেরণাধিক্যে ক্রমান্বয়ে তিনি আহার নিদ্রা একবারেই ত্যাগ পান। কিছু দিনের মধ্যে যেন তিনি উম্মাদের মত হইয়া গেলেন। উহা তাঁহার মস্তিষ্ক বিকৃতি রোগ মনে করিয়া-অনেক প্রকার চিকিৎসা করা হইল। কোন প্রকার পরিবর্ত্তন না দেখিয়া সকলই ব্যাকুল হইয়া পড়িলেন। দিন দিন তাঁহার প্রেরণা আরও বাড়িতে লাগিল। একদিন এমতঅবস্থা হইয়া গেল যে, তাঁহার মাথার উপর অনেক পানি ঢালার পরও শান্ত অবস্থা ফিরিয়া আসিল না। ইহাতে তাঁহার পিতা ছাহেব বিশেষ ভাবে চিন্তাশীল হইয়া পড়িলেন। বড় সন্তানের এরূপ অবস্থা অথচ কোন ঔষধ খুঁজে পাইতেছেন না। এক রাত্রে তিনি চিন্তিত অবস্থায় বিশ্রাম করিতেছিলেন, হঠাৎ দেখিতে পাইলেন, হজরত ছাহেব কেবলা তাহার পার্শ্বে আসিয়া বলিতেছেন, “আপনি উদগ্রীব হইয়াছেন কেন? আমার ক’বা অর্থাৎ জুব্বাটী তাঁহার গায়ে পরাইয়া দিন”। তিনি তাড়াতাড়ী আসিয়া হজরতের স্মৃতি কামড়া হইতে ক’বাটী তালাশ করিয়া নিলেন এবং ক’বাটী তাঁহার গায়ে পরাইয়া দিয়া তিনি আপন হুজুরায় বিশ্রাম করিতে আসিলেন। তাহার একটু তন্দ্রা আসিয়াছে, এমতাবস্থায় তাঁহার উক্ত সন্তান আসিয়া তাঁহার হুজরায় দরজা খুলিরে চেষ্টা করিলেন। তিনি উঠিয়া তাঁহাকে দরজা খুলিয়া দিলেন। তিনিও তাহার পার্শ্বে বিছানায় শুইয়া পড়িলেন। তাঁহার এমন নিদ্রা আসিল যে, সারা রাত্র গত হইয়া পর দিনের সন্ধ্যা পর্য্যন্ত ঘুমাইয়া রহিলেন। ঘুম হইতে উঠিয়া দেখিলেন, তাঁহার অবস্থা প্রায় শান্ত। তাহাকে স্নান ও আহারান্তে পুনঃ বিশ্রাম করিতে দিলেন। এইবারও তিনি সারারাত্র ও পরের দিনের ৯টা পর্য্যন্ত ঘুমে বিভোর হইয়া রহিলেন। সেই দিন হইতে দেখা গেল; তিনি সম্পুর্ণ ভাল ও শান্ত। কিছু দিনের পর পুনঃ তাঁহার প্রেরণাধিক্য দেখা দিল। তাঁহার পিতা ছাহেব বিশেষ চিন্তিত হইয়া গেলেন। দেখিতে পাইলেন, জনাব মৌলানা নুরুচ্ছফা নামক হজরতের এক প্রিয়তম ছাহেবের কশ্ফ খলিফা দরবার শরীফের আসিয়া তাঁহার সাক্ষাতে গেলেন এবং বলিতে লাগিলেন, “হুজুর! গত রাত্রে হজরত আকদছ আমাকে দেখা দিয়া নির্দেশ দিলেন, মিঞা! আপনি আমার মিঞাকে বলুন তিনি পেরেশান কেন? আমি প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করিতেছি; আপনি তাঁহাকে বলিয়া দেন যে, জেয়াউল হক আমিই”। ইহা দর্শনে আমি ক্ষণ-কাল বিলম্ব না করিয়া নির্দ্দেশ পালনে আপনার খেদমতে আসিয়াছি। এই ঘটনার পর তাহারা প্রত্যেকে দৃঢ়রূপে বুঝিতে পারিলেন যে, ইহা আধ্যাত্মিক প্রেরণাধিক্য মাত্র। [গাউসুল আজম হজরত মাওলানা শাহসূফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী (ক.) জীবনী গ্রন্থের (লেখক-মৌলানা মহাং ফয়েজ উল্লাহ ভুঁইয়া (গোল্ডমেডালিষ্ট) সীতাকুন্ড, প্রথম প্রকাশ-মার্চ্চ ১৯৬৭ ইংরেজী) একত্রিংশ পরিচ্ছেদে “হজরতের কালাম ও ক’বা মারফত প্রভাব বিস্তারে বিস্ময়কর কেরামত” আধ্যায়ের “দ্বিতীয় ঘটনা” শিরোনামে নিম্নোক্ত ঘটনা লিপিবদ্ধ আছে]
৪) শাহানশাহ বাবাজানের অত্যধিক ভাব-বিভোরতার কোন পরিবর্তন না দেখে হযরত বাবা ভান্ডারী (কঃ)’র প্রখ্যাত খাদেম সহর আলী প্রকাশ লক্ষ্মীর বাপ আবেদন জানালে স্বপ্নে হযরত বাবা ভান্ডারী বলেন,
“আমি জিয়াউল হক মিঞা ও সামশুল হুদা মিঞাকে আমার পাঠশালায় ভর্তি করেছি। ওসব তুই বুঝবি না”। [মহান তিনে শক্তি” অধ্যায়]
৫) তৎকালে যোগাযোগের সুব্যবস্থার অভাবে সুদূর দাঁতমারা গ্রামে বিবাহ অনুষ্ঠানে যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে বিয়ের পূর্বরাত্রে বংশধর সৈয়দ আবু তাহের সাব-রেজিষ্ট্রারকে হযরত গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী (কঃ) স্বপ্নে বলেন,
“জিয়াউল হককে আমি তোমাদের জন্য বাতি জ্বালাচ্ছি”। [মহান তিনে শক্তি” অধ্যায়]
৬ মাঘ মাসের দুই তারিখ, ষোল জানুয়ারী ১৯৬৬ সাল। হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (কঃ)স্বপ্নে তাঁর পিতাকে নির্দেশ দেন,
“জিয়াউল হক মিঞার আমানত তাঁকে অর্পণ করুন”
৯ মাঘ, তেরশ তিয়াত্তর বঙ্গাব্দ। ওরশ শরীফ উপলক্ষে দেশ-বিদেশ দূর-দূরান্ত হতে বহু লোক এসেছে এবং আরো আসছে। পরদিন দশ মাঘ ওরশ শরীফের প্রধান অনুষ্ঠান। সকাল এগারটায় রওজা পাক গোসল দেওয়া হয়। হযরত সাহেব কেবলার অছি-স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি খাদেমুল ফোকরা হযরত মাওলানা শাহ্সুফি সৈয়দ দেলাওর হোসাইন সাহেব স্বপ্নের নির্দেশ পালনে রওজা শরীফ স্মৃতিকক্ষ হতে হলুদ ও খয়েরি রংয়ের দু’খানা চাদর খাদেম মালেকের দ্বারা আনয়ন করেন। অতঃপর হযরতের পবিত্র গদি শরীফে দু’পা ঝুলিয়ে রওজামুখী হয়ে বসেন। পুত্রকে আনার জন্য দরবারের প্রধান কর্মকর্তা মাওলানা সৈয়দ মাহফুজুল করিম সাহেবকে পাঠান। তিনদিন হতে যে ঘরের দরজা বন্ধ মাওলানা সাহেব দরজায় পৌঁছামাত্র খোলেন। হযরতের আমানত গ্রহণের জন্য তাঁকে নিতে পাঠিয়েছেন বলে জানালে খুবই শান্তভাবে বলেন, “আচ্ছাজী, আমি জানি। একটু অজু করে আসি”। হুজরায় গিয়ে পিতাকে যথাবিহিত সম্মান জানিয়ে একটু দূরে নতজানু হয়ে পিতার মুখোমুখি এমনভাবে বসেন যেন হযরত সাহেব কেবলা ও হযরত বাবা ভান্ডারীর রওজা শরীফ পিছনে না পড়ে। হলুদ রংয়ের চাদরটা নিজ গায়ে জড়িয়ে পিতা গুরু গম্ভীর স্বরে বলেন,
“হযরত গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর (ক.) যে পবিত্র মহান আমানত আমার হেফাজতে ছিলো তা আজ আপনাকে অর্পণ করছি; হেফাজত করবেন”
একথা বলে খয়েরি রংয়ের চাদরখানা নিজ -হাতে ছেলের গায়ে পরিয়ে দেন। ছেলের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়, আলহামদুলিলাহ্। এ সময়ে হুজরার বারান্দা ও মাঠে উপস্থিত ছিলেন হযরত সাহেব কেবলার খলিফা মাওলানা সৈয়দ আমিনুল হক ফরহাদাবাদীর (র.) পুত্র আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল ইসলাম, বাঁশখালীর প্রসিদ্ধ জমিদার হাবিবুর রহমান চৌধুরী, ফটিকছড়ি থানার আজিমপুর গ্রামের এডভোকেট আফসার উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম শহরের দেওয়ান বাজারের জনাব আরহাম আলী চৌধুরী, বোয়ালখালী থানার সারোয়াতলীর ডাঃ রুহুল আমিন সিদ্দিকী এবং আরো অনেকে। চাদর পরিয়ে দিলে তাঁর মস্তক ও শরীর হতে বিন্দু বিন্দু ঘাম বের হতে থাকে। হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক শাহ্ এভাবেই গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর প্রতিনিধিত্ব লাভ করেন। পুত্রের ডায়রীতে পিতা-পুত্র সম্পর্ক যেভাবে বর্ণিত, ‘মার্চ মাসের ১৫ তারিখ অলিয়ার প্রতি আমার মন নিবিষ্ট (রুজু হয়) ও বাবাকে চিনি বা চিনতে শিখি। ও মারে মা হেতান (তাঁর) বড় বড় দর্জা (তাজিম) আদব’। [মহান তিনে শক্তি” অধ্যায়]
এভাবেই জন্ম লগ্ন হতে বিশ্ব অলি রূপে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত হযরত শাহানশাহ বাবাজান (কঃ) কে হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ও হযরত বাবা ভাণ্ডারী (কঃ) উনাদের রুহানী তত্ত্বাবধানে পরিচালিত করেছেন