"মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ ",আতুরার ডিপো হাসেম বাজার শাখা। অস্থায়ী ঠিকানাঃখালেদা-মাহমুদা ম্যানশন,সঙ্গীত রোড,পাঁচলাইশ,চট্ট্রগ্রাম. আলাপনী-০১৮৩৮৬৩৭৬৯৮।ই-মেইলঃhoqcommity@gmail.com।

গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারি কঃ এর কেরামত পর্বঃ ১০

 আল্লাহ তা'য়ারা রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হওয়া মহান হযরতগণ জীবিত ও আল্লাহর পক্ষ থেকে জীবিকাপ্রাপ্ত।এ
বিষয়ে আল কুরআনুল করীমের বিভিন্ন আয়াতে সুস্পস্ট সাক্ষ্য বিদ্যমান,ইরশাদ করেন,
وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَكِنْ لَا تَشْعُرُونَ )
"আল্লাহর পথে যারা নিহত হয়, তাদের মৃত বল না। তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝতে পার না।" (সুরাঃ-বাকারা,আয়াতঃ-১৫৪) এছাড়া অন্য আয়াতে বর্ণীত,
لاَ تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاء عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ
'যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছেন,তাদের কখনো মৃত ধারণা করোনা,বরং তাঁরা তাদের প্রতিপালকের নিকট জীবিকা(রিযিক)-প্রাপ্ত।(সুরাঃআল ইমরান,আয়াত-১৬৯)।ইসলামের বহিঃশত্রু দমনের যুদ্ধে নিহত শহীদগণ যেমন সুক্ষ্ম জীবন লাভ করেন,অনুরুপ প্রভুর মিলন পথের প্রতিবন্ধকরুপি মহাশত্রু কুপ্রবৃত্তির বলিদান তথা আল্লাহর ইচ্ছায় উৎস্বর্গিত প্রেমের মরা মরেও অমর।মাটি,পানি ও আগুন তাঁদের দেহ বিনাশ করে না,মহানবি দঃ কোন এক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনকালে সাহাবিদের সম্বোধন করে বলেন,رجعنا من الجهاد الأصغر إلى الجهاد الأكبر,قدمتم خير مقدم قدمتم من الجهاد الأصغر إلى الجهاد الأكبر مجاهدة العبد هواه
তোমরা খুব উত্তম স্থানেই ফিরে এসেছো তোমরা ছোট জিহাদ থেকে বড় জিহাদের দিকে ফিরে এসেছো আর তা হলো অন্তরের সাথে জিহাদ করা।আমরা ছোট জিহাদ থেকে বড় জিহাদের দিকে ফিরে এসেছি।” (বায়হাকি,দাইলামী, কানযুল উম্মাল, জামউল জাওয়ামি)
জিহাদে আকবর বা বড় যুদ্ধ তথা নফসের সাথে যুদ্ধ করে আত্মশুদ্ধির শিক্ষা দেয় ইসলাম।এ যুদ্ধের সমরাস্ত্র রূপে আল্লাহ মু'মিন্দের কে দু'টি জিনিষ দান করেছে।যথা ক- আল্লাহর জালালতের ভীতি,খ- নফসকে স্বীয় প্রবৃত্তি থেকে নিবৃত্তি করা।
وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى
"পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল-খুশী থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে" (সুরাঃনাযিয়াত,আয়াত-৪০)
فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى "তার ঠিকানা হবে জান্নাত।"সুরাঃনাযিয়াত,আয়াত-৪১)
قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا "যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়।"(সুরা-শামস,আয়াত-৯)
এ সফলকাম অমর সত্তাদের অমরত্বের নিদর্শন প্রদর্শন পূর্বক আল্লাহ তা'য়ালা দ্বীনে ইসলামের সভ্যতার প্রমাণ জোরদার করেন যুগে যুগে।
নিম্নে এ ধরণের কয়েকটি ঘটনা উপস্থাপিত হলঃ
১। হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (ক)'র বিশিষ্ট খলিফা শাহসুফি মাওলানা সৈয়দ আব্দুস সালাম ভূজপুরি (রাঃ),৪ পৌষ ১৯৪৯ সালে ইন্তেকাল করেন।তাকে ইদলপুর প্রসিদ্ধ বুজুর্গ বোডা শাহের মাজারের পাশে দাফন করা হয়।ইন্তেকালের প্রায় দেড় বছর পর তিনি বোডা শাহের সাথে তাঁর মশররবের মিল হচ্ছেনা বলে নিজ পুত্র মাওলা সৈয়দ মঞ্জুরুল হক ও মাওলানা সৈয়দ হাবিবুল হক সাহেবদ্বয় কে স্বপ্নে তাবুত অন্যত্র স্থানান্তরের নির্দেশ দেন।স্বপ্নাদিস্ট হয়ে তাঁরা গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের সাথে পরামর্শ করে তাবুত উত্তোলন করেন।হাজার মানুষের উপস্থিতিতে কাফন খুললে দেখা যায়,পূর্ণিমার চন্দ্রবৎ মুবারক হতে মুক্তাঁর ন্যায় বিন্দু বিন্দু ঘর্ম নির্গত হচ্ছে আর ওষ্ঠদ্বয় নড়ছে।তাবুত ও কাফন ও শরির মুবারক একটুও পরিবর্তন হয় নি বরং পূর্বের অপেক্ষা অধিক উজ্জল ও সুঘ্রানময় হয়েছে।অতঃপর তাঁকে বর্তমান মাজারস্থ স্থানে দাফন করা হয়।(রত্ন বিন্দু ২য় প্রকাশে গ্রথিত গ্রন্থকার মহোদয়ের সংক্ষিপ্ত জিবনি কিতাব হতে নেওয়া)
২।হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (ক)'র ভক্ত জনাব সৈয়দ আহমদ হুসাইন রহঃ ৩ জানুয়ারি ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করলে ফটিকছড়ির নানুপুরস্থ আজিজুল্লাহ দারগা মসজিদ কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।২৭ ডিসেম্বর ২০০৪ খিস্টাব্দে মৃত আবু আহমদের কবর খননকালে মাটি সরে পড়লে ৩৭ বছর পূর্বে দাফনকৃত আহমদ হুসাইন সাহেবের পায়ের দিকের তুষার শুভ্র কাফন দেখা যায়।এ ঘটনা কাফনের ছবিসহ জাতীয় ও স্থানিয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে- (দৈনিক ইত্তেফাক ২৮ ডিসেম্বর ২০০৪,দৈনিক চট্টগ্রাম মঞ্চ ২৯ ডিসেম্বর ২০০৪)
৩। কুতুবুল আকতাব গাউসুল আ'যম শাহসুফি সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাভান্ডারি (ক)'র মেয়ের ঘরের নাতি শাহজাদা সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম প্রকাশ গায়েবিধন মাইজভাণ্ডারী (ক)'র মুরিদ মাওলানা আব্দুর রশিদ মাইজভাণ্ডারী রহঃ ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।রাউজান, নোয়াপাড়া ইউনিয়নের শেখ পাড়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।বিগত ২০/০২/২০১০ খ্রিস্টাব্দের দিকে তাঁর মাজার পুকুরে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে নিজ পুত্র এডভোকেট আতহার মিয়াকে মাজার সংস্কারের জন্য বার বার স্বপ্নাদেশ করেন।২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ আতহার মিয়া সংস্কারের জন্য শ্রমিক নিয়োগ করেন।পরদিন ২৭ ফ্রেবুয়ারি শ্রমিকগণ খনন কাজ শুরু করেন এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি মাটি সরাতে গেলে তাবুতের কিছু অংশ ভেঙ্গে যায় এবং এতে দুই যুগাধিক পূর্বের সাদা কাফন অবিকৃত দেখা যায়।ঘনিষ্ট আত্মীয় ও সাংবাদিকদের কৌতূহল বশরঃ কাফন খুলে শরির ও চেহেরা সজীব দেখতে পান,স্থানীয় হাজার হাজার লোক ও বহু সাংবাদিক ঘটনাটি দেখতে ভীড় জমান।বহু জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিকে তাবুতের ছবিসহ ঘটনাটি সবিস্তারে প্রকাশিত হয়।(দৈনিক পূর্বকোণ ১ ও ২ মার্চ ২০১০,দৈনিক ইনকিলাব ১ মার্চ ২০১০,দৈনিক চট্টগ্রাম মঞ্চ ১ মার্চ ২০১০ ও দৈনিক ডেসটিনি ১ মার্চ ২০১০)
৪।ফটিকছড়িস্থ কাঞ্চনপুরের এক বারই মনোপ্রানে হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (ক)'র ভক্ত অনুরক্ত ছিলেন।জীবদ্দশায় প্রায়শ গাউসুল আ'যমের দরবারে হাদিয়া-তোহফা আনয়ন করতেন। ওই হিন্দু বারই মরণকালে স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্পষ্ট উচ্চারণে কালেমায়ে তৌহিদ পাঠ করেন।আত্মীয়-স্বজন রাম-রাম বলে তাঁকে ঘরের বাইর করে দিল।চুপ-চুপ করে ঘটনাটি চুপিয়ে রাখল।কিন্তু ওই আদি সৌভাগ্যশীল বারই তৌহিদের বাণি উচ্চারণ করতে করতে মৃত্যু বরণ করল।হিন্দু ধর্মের রীতি অনুসারে তাঁকে চিতায় নিয়ে লাকড়ী ও পরিমাণ মত তৈল-ঘৃত দিয়ে আগ্যন দিল।পরস্ত হিন্দুরুপি ওই আকৃতি ও প্রকৃতিগত মু'মিনের ত্বকের উপরের অংশ কিছু কিছু দাহ হলেও বক্ষে দাগ মাত্র লাগে নি।তৈল-ঘি দ্বিগুণ বাড়িয়েও জ্বালাতে ব্যর্থ হয়ে লাশ ধুরং নদীতে ফেলে দিল।ওই শবদেহ ভাসতে ভাসতে এক জায়গাতে গিয়ে আটকে রইল।স্থানীয় বাসিন্দারা গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (ক) কর্তৃক স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে অথবা পুলিশ লাশ তুলে নিয়ে গোসল ও জানাজা শেষে দাফন করেন।(আয়নায়ে বারি ১ম প্রকাশ ২৩৪-২৩৭ পৃষ্ঠা)
৫।ফটিকছড়ি নিশ্চিন্তআপুর নিবাসী বৌদ্ধ ধননজয় হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (ক) এরপরম ভক্ত ছিলেন।তিনি ইসলাম ধর্মে বারবার দীক্ষিত হবার জন্য অনুরোধ করলেও হযরত আকদছ (ক) সম্মতি না দেওয়ায় মনস্কাম পূর্ণার্থে হযরতের পরম স্নেহভাজন পৌত্র অছিয়ে গাউসুল আ'যম শাহসুফী সৈয়দ দেলাওয়ার হুসাইন মাইজভাণ্ডারী (ক) কে সুপারিশের জন্য অনুরোধ করেন। অছিয়ে গাউসুল আ'যম হযরতের খিদমতে ধননজয়ের আর্জি পেশকরলে তিনি ধননজয় কে তালাশ করেন।ধননজয় 'হুজুর দাস হাজির' বলে হযরতের সম্মুখে করজোড়ে বসে পড়েন।হযরত (ক) তাঁকে বলেন,"তুমি তোমার ধর্মে থাক,আমি তোমাকে মুসলমান করলাম" বললেও তিনি বসে রইলেন।হযরতের খাদেম মৌলভি আহমদ ছফা কাঞ্চনগরী (রা) তাঁকে পেছন হতে ইশারায় ডেকে নিয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে,তাকে হাকিকতে মুসলমান করা হয়েছে।এরপর হতে তিনি প্রায় সময় হযরতের হুজরায় তাঁর ছোহবতে সময় কাটাতেন।হযরতের বেছাল শরিফের পর বাবাজান কেবলার হুজরাতে প্রায় রাত কাটিয়ে দিতে।তার স্ত্রীর বর্ণনামতে,মৃত্যুর পর তাঁকে অনেকে স্বশরিরে বিচরণ করতে দেখেছেন।( হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (ক) জীবনি ও কেরামত ষষ্ঠ প্রকাশ,১৯৮৫,১৯২ পৃষ্ঠা)।
উপরিউক্ত বর্ণনামতে সুস্পষ্ট যে,গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (ক)'র প্রতি ভক্তি-বিশ্বাস ও তাঁর প্রবর্তিত তরিকার অনুসরণে মরেও অমর হয় এমন সফল মু'মিন তথা প্রকৃত সুন্নি-মুসলমান হওয়া যায়।যুগ-যুগান্তরে মাইজভাণ্ডারী আশেক-ভক্তের দেহ অবিকৃত থাকে।মাইজভান্ডারি তরিকার সভ্যতার অনুকুলে ঐরূপ জ্বলন্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কিছু সংখ্যক দুর্জন এই তরিকা ও এর অনুসারীদের বিপক্ষে অপপ্রচারে মেতে উঠেছে।একদিকে মাইজভাণ্ডারী আশেক-ভক্ত কাল-কালান্তরে কবরে অবিকৃত থাকার প্রমাণ মিলে,অপরদিকে নামকরা বহু পীর কে মৃত্যুর পর পচে যাওয়ার ভয়ে বরফ দিয়ে রাখতে হয়।এতে কি হক বাতিলের পরিচয় মিলে না? তবুও সত্য কে সত্য বলতে কেন এত দ্বিধা? মিথ্যাকে সত্য রূপে প্রতিষ্ঠার জন্য অপতৎপর মূল্যবান সময়ের কেন এ অপচয়? প্রশ্ন কয়টির সমাধানে দৈনিক জং পত্রিকার উদ্ধতিতে বিবৃত জার্মান চিকিৎসা বিজ্ঞানির মত কারো ঘুমন্ত বিবেক-কে নাড়া দেবে এ প্রত্যাশায় এ ক্ষুদ্র নিবন্ধের অবতারণা,আল্লাহ বুঝার তওফিক দান করুন। আমিন।{রেফারেন্সঃ শানে গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী 'রাদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু' প্রবন্ধ সম্ভার-১ ও উরসে হাদিয়ে যমান (রাদ্বি) স্মারক গ্রন্থমালা-২}।