"মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ ",আতুরার ডিপো হাসেম বাজার শাখা। অস্থায়ী ঠিকানাঃখালেদা-মাহমুদা ম্যানশন,সঙ্গীত রোড,পাঁচলাইশ,চট্ট্রগ্রাম. আলাপনী-০১৮৩৮৬৩৭৬৯৮।ই-মেইলঃhoqcommity@gmail.com।

দুই গাউসুল আ'যম (পর্বঃ ৩)

হযরত শায়খ আবদুল হক দেহলভী (রঃ) তার শরহে ফতুহুল গাইবে লিখেছেনঃ হযরত গাউসুল আ'যম বড় পীর (কঃ) উল্লেখিত উক্তি হযরত গাউসুল আ'যম বড় পীর সাহবের জামানার ওলী আল্লাহদের সম্পর্কে ছিল। তিনি আরও বলেন, হযরত মুজাদ্দেদে আলফেসানী শায়খ আহম্মদ সরহন্দী (রহঃ) বলেন- হযরত গাউসুল আ'যম বড় পীর (কঃ) উল্লেখিত উক্তি কেবল তার জামানার আউলিয়াগণ সম্পর্কেই ছিল। পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী আউলিয়াগণ এর অন্তর্ভুক্ত নহেন। মহীউদ্দিন ইয়াহিয়া হাম্বলী তৎপ্রণীত কালায়েদে জওহারে লিখেন যে, ‘কদম’ শব্দের এখানে আভিধানিক অর্থের পরিবর্তে পারিভাষিক অর্থ গ্রহন করতে হবে। কেননা এর সহিত শিষ্টাচার প্রশ্নও জড়িত রয়েছে। সুতারাং কদম শব্দের ভাবার্থ গ্রহন করলে বাক্যটির গোটা অর্থ দাঁড়ায় যা, তৎকালে প্রচলিত সকল তরিকা হতে হযরত বড়পীর সাহেবের তরিকাই উচ্চ এবং জয়যুক্ত। শেখ ইযযুদ্দী আবদুস সালাম ও এই উক্তি সমকালীন অলিউল্লাহগণের সম্পর্কে প্রযুক্ত বলেছেন এবং উপরোক্ত উক্তি করেছেন।
হযরত শায়খুল আকবর মহিউদ্দিন ইবনুল আরবী (রঃ) বলেনঃ ‘প্রত্যেক যুগে হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর পদাংকানুসারী একজন বিদ্যমান থাকেন। যিনি যুগের আবদুল্লাহ হন। তাকে কুতুবুল আকতাব বা গাউস বা গাউসে জমান বলা হয়। (ফছুছুল হেকম উর্দ্দু ২৩২ পৃষ্টা)।কুতুবুল
আকতাব দের মধ্যে বিশেষ উচ্চতর মর্যাদায় আসীন হিসেবে মহান দুই যুগে দুজন গাউসুল আ'যম কে দেখা যায় দাবিদার হিসেবে।সুতরাং উপরোক্ত কালাম এবং নির্ভরযোগ্য সূত্র অনুসারে আমরা বলতে পারি পৃথিবীতে একাধিক গাউসুল আ'যম আবির্ভাব হয়েছে এবং শুধুমাত্র একজন গাউসুল আ'যম আবির্ভাব হয়েছে এটা আমরা বলতে পারবনা। রাসুল (দঃ) বলেনঃ ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা আমার উম্মতের জন্য প্রতি শতাব্দীর প্রারম্ভে এমন ব্যক্তি প্রেরন করেন, যিনি দ্বীনের সংস্কার সাধন করেন’’ এই হাদিস শরিফটি হাকিম এবং বায়হাকী মুস্তাদরাকে উল্লেখ আছে। এই হাদিসটি জামেউস সগীর নামক কিতাবে, আল্লামা হক্কী (রঃ), মিরকাতুস সাউদ শরহে সুন্নাতে আবু দাউদ-আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতী (রাঃ), আজমাউল ফতোয়া কিতাবে –মওলানা আবদুল হাই লকনবী (রাঃ) উল্লেখ করেন।
গাউসুল আ'যম বা মুজাদ্দেদ বিষয়ে এর চেয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্র নাই সুতরাং যারা বলেন পৃথিবীতে শুধুমাত্র গাউসুল আ'যম আবির্ভাব হয়েছেন তারা ভুল মত পোষণ করেন। এই বিষয়ে ঈসাপুরি বলেন, যারা হযরত গাউসুল আ'যম শেখ আবদুল কাদের জিলানী (ক) পর আর কেহ গাউসুল আ'যম হবেন না বলে ধারাণা করে অথবা মাশরেকি মাগরিবি ধারণা, তারা ভ্রান্ত। তারা রাসুল্লাহর হাদিসের বিরুদ্ধে ভ্রান্ত মতের পোষকতা করতঃ গাউসিয়ত বড় পীরের (কঃ) জাতে খতম হয়েছে বলে অনুমান করে, যেমন শিয়াগণ বলে যে বেলায়েত হজরত আলী (ক) জাতে খতম হয়েছে [বেলায়তে মুহিত ফি-শানে গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (কঃ)]।
পীরানে পীর দস্তগীর (কঃ)'র রুহানী সন্তান ও বিশ্ব বিখ্যাত ওলী আল্লা শায়খ মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী (রঃ) তার বিখ্যাত গ্রন্থ ফছুছুল হেকম (কিতাবটি রাসুল করিম (দঃ) কর্তৃক স্বপ্নাদিষ্ট হইয়া লিখেছেন) কিতাবে শীস (আঃ) অধ্যায়ের শেষ ভাগে খাতেমুল অলদ বা গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ) শান মান সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণানা করেন যা নিন্মে কিছু আলোচনা করা হলঃ
তিনি খাতেমুল অলদের সম্পর্কে বলেনঃ এই ছেলে অব্যবহিত পূর্বে তার এক বোন জন্ম গ্রহন করবে। তার জন্ম চীন প্রান্তে হবে। তার ভাষা সেই নগরের ভাষা হবে।অতঃপর নর-নারীর মধ্যে বন্ধ্যারোগ সংক্রমিত হবে। জনন প্রজনন ব্যতীতই বিবাহের আধিক্য হবে। মানবজাতীকে তিনি আল্লাহর দিকে আহবান জানাবেন কিন্তু সন্তোষজনক সাড়া পাওয়া যাবে না। তার ও সেই যুগের মুমিনদের তিরোধনের পর মানব স্বভাব চতুষ্পদ জন্তুর স্বভাবে পরিনত হবে।হালাল হারাম পরিচয় করবে না । ধর্ম ও বিবেচনা হতে দুরে সরে প্রকৃতি ও প্রবৃতির নির্দেশে কাম স্পৃহা চরিতার্থ করতে মশগুল থাকবে। (সংগ্রহ বেলায়তে মোতলাকা ৩৩ পৃষ্ঠা)উপরোক্ত ভবিষ্যত বানী সমূহ গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ) সাথে সম্পূর্ন মিলে যায় এবং ইহা গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ) প্রতি প্রযোজ্য হয়। যেমন এখানে উল্লেখ আছেঃ (১) এই ছেলে অব্যবহিত পূর্বে তার এক বোন জন্ম গ্রহন করবে- গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ)জন্ম গ্রহনের পূর্বে এক বোনের জন্ম হয়।(২)তার জন্ম চীন প্রান্তে হবে-ইতিহাস ও ভূগোলের বর্ণানা অনুসারে দেখা যায় চীন প্রান্তে বৌদ্ধ জাতির আবাসস্থালে পার্বত্য চট্রগ্রাম সংলগ্ন ও হিন্দু জাতির তীর্থ স্থান সীতাকুন্ডের পূর্বে অবস্থিত মেরু রেখার সংলগ্ন পূর্বে গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ) জন্ম। যখন ইবনুল আরবী (রঃ) কিতাবটি লিখেছেন তখন গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ) জন্ম স্থান ফটিকছড়ি সহ পার্বত্য চট্রগ্রাম চীনের সহধর্ম বৌদ্ধ রাজার শাসনে ছিল। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পার্বত্য চট্রগ্রামে চীনা বংশীয় লোকেরা বাস করত। তাহা বর্তমানেও চীনের ধর্ম এবং চীনের লোকের দৌহিক গঠনের সাথে মিলে যায়। ফটিকছড়ি এলাকার নামগুলীর সাথে পার্বত্য চট্রগ্রাম এর বৌদ্ধ জাতির (মগ-চাকমা) নামের সাথে সংলিষ্টতা থেকে বুঝা যায় যে এখানের বৌদ্ধ জাতির (মগ চাকমা) চীনা বংশীয় লোকের বাস করত যেমনঃ গাউছুল আযম মাইজভান্ডারী(কঃ) জন্ম স্থান ফটিকছড়ি এলাকা নাম পাহাড়ি ছড়ার নামানুসারে। ফটিকছড়িতে আরো দেখা যায় মগ পুকুর, মগ ভিটা, মালুমের টিলা, দমদমা, বৃন্দাবন হাট,পাইন্দং, ধুরুং, হেয়াকো, ইত্যাদি নাম সমূহ। (৩) অতঃপর নর-নারীর মধ্যে বন্ধ্যারোগ সংক্রমিত হবে-বর্তমান সময়ে বিশেষ করে বাংলাদেশেই বেশি বন্ধ্যারোগে সংক্রমিত হচ্ছে। (৪) মানবজাতীকে তিনি আল্লাহর দিকে আহবান জানাবেন কিন্তু সন্তোষজনক সাড়া পাওয়া যাবে না-গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ)সহজে খোদা প্রাপ্তির পথ (বিশেষ করে সপ্ত কর্ম পদ্বতি) দেখায়ে গেছে কিন্ত এখনো ও সন্তোষজনক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না (৫) তার ও সেই যুগের মুমিনদের তিরোধনের পর মানব স্বভাব চতুষ্পদ জন্তুর স্বভাবে পরিনত হবে- পেপার পত্রিকা ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখলে ও পড়লে বুঝা যাবে যে বর্তমান সময়ে মানুষের চরিত্র কোথায় গেছে। (৬) হালাল হারাম পরিচয় করবে না- বর্তমান সময়ে ব্যাংকিং সিস্টাম থেকে শুরু করে বেশির ভাগ জায়গা এখন সুদ/হারাম দেখা যাচ্ছে। এটা গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ)এর কালাম থেকে সহজে বুঝা যায়। তিনি বলেনঃ কবুতরের মত বাছিয়া খাও। (৭) ধর্ম ও বিবেচনা হতে দুরে সরে প্রকৃতি ও প্রবৃতির নির্দেশে কাম স্পৃহা চরিতার্থ করতে মশগুল থাকবে-বর্তমান সময়ে পৃথিবীতে যে ভাবে অবৈধ যৌন কার্যকলাপ শুরু হয়েছে যা আইমে জাহেলিয়াত যুগের পর্যায়ে পৌছে গেছে।
ইবনুল আরাবী (রঃ) আরো বলেনঃ কামালিয়তের কোন প্রশংসা তার বুজর্গিতে বাদ পড়ে না, যদিও তার এই গূনাবলী বর্হিদৃষ্টিতে বা শরআ মতে ভাল বা মন্দ। এই সর্ববেষ্টনকারী বেলায়ত ‘’ আল্লাহ’’ নাম বিশিষ্ট নামধারী অলীউল্লাহর জন্য নিদির্ষ্ট (ফছুছু ১১১ পৃঃ)।
গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ)'র পিতা রাসুল করিম (দঃ) কর্তৃক স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে আল্লাহ ও রাসুল করিম (দঃ) এর সমন্বয় নাম বিশিষ্ট তার নাম আহমদ উল্লাহ (উল্লাহ অর্থ আল্লাহ) রাখেন। যা ইবনুল আরাবী (রঃ) উপরোক্ত কালামের সাথে মিলে যায়। তার প্রতিষ্ঠিত মাইজভান্ডার শরিফের আধ্যাক্তিক কর্মকান্ড বা গূনাবলী বর্হিদৃষ্টিতে বা শরআ মতে এখনও অনেক আলেম ওলামার কাছে ভাল বা মন্দ, যা পৃথিবীতে অন্য কোন ওলী আল্লার ব্যপারে দেখা যায়নি। বিশ্ব বিখ্যাত আউলিয়া শায়খ মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী (রঃ) তার বিখ্যাত গ্রন্থ ফছুছুল হেকম কিতাবে আরো লিখেছেন ˝মানব জাতীর মধ্যে হযরত শীস (আঃ) এর অনুসারী ও তার ভেদাভেদের ধারক ও বাহক এক ছেলে ভুমিষ্ট হবেন। তার পরে এইরূপ মর্যাদা সম্পন্ন কোন ছেলে জন্ম গ্রহন করবেনা। তিনি খাতেমুল অলদ হবেন˝।। [সংগ্রহঃ গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারীর জীবনী ও কেরামত]
হজরত শায়খ মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী (রঃ) বর্ণানায় নিশ্চিতভাবে বলা যায় প্রথম খাতেমুল অলদ গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ)। যা অসংখ্য আউলিয়া কেরাম তাদের বিভিন্ন কিতাবে তাদের লেখনীর মাধ্যমে বর্ণনা করেন। ইবনুল আরাবী (রঃ) খাতেমুল অলদ গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ) সম্পর্কে তার বিখ্যাত গ্রন্থ ফছুছুল হেকমে তার শান মান সম্পর্কে বলেনঃ থাতেমুল আউলিয়া রসুলুল্লার অলীয়ে ওয়ারেছ হন। খাতেমুল আউলিয়া রসুলুল্লার বিভিন্নরূপের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম রূপ’’ [ফছুছু ১১১ পৃঃ], খাতেমুল আউলিয়া ইসলামী ইমারত বা দেওয়ালের শেষ ইট বা গাঁথুনী, যার দ্বারা ইসলামী ইমারত পূর্ণতাপ্রাপ্ত হবে [ফছুছু-৯২ পৃঃ] ৫৯৫ হিজরী সনে আমার সংগে তার সাক্ষাত হয়। তার শরীরস্থ বেলায়তের চিহ্ন তিনি আমাকে দেখান। তার খোদায়ী রহস্যপূর্ণ বাণী সাধারন লোকেরা স্বীকার করবে না, যদিও তার খাতেমে বেলায়তের (পূর্ব যুগের সমাপ্তকারি) চিহ্ন সাধারন লোকচক্ষুর অন্তরালে তথাপি আমার জামানাতেও তিনি বিদ্যমান আছেন" [ফছুছু-৯৩ পৃঃ] গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (কঃ) অসংখ্য কারামত প্রকাশ করেছিলেন তার কারামত এর মধ্যে বিশেষভাবে লহ্ম্যণীয় হচ্ছে তার ফয়েজ বরকতের মাধ্যমে অসংখ্য আউলিয়া সৃষ্টি করা, তার খলিফাদের মধ্যে অসংখ্য আউলিয়া ছিলেন, বাংলাদেশে এমন কোন অঞ্চল নাই তার খলিফা নাই, বাংলাদেশ ছাড়াও বার্মা , ভারত, পাকিস্থান সহ বিভিন্ন দেশে তার খলিফা ও তাদের মাজার দেখা যায়।গাউসুল আ'যম হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (কঃ) ও গাউসুল আ'যম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ) সময়ের অনেক আলেম ওলামা তাদেরকে চিনতে পারে নাই এবং বর্তমানেই অনেকেই তাদের গাউসুল আজমিয়তের স্বীকৃতি দেয় না বা অঞ্চল একালার মধ্যে গাউসিয়তের বাউন্ডারি করে দেয় ( যেমনঃ মাশরেকি গাউসুল আ'যম,মাগরিবি গাউসুল আ'যম ইত্যাদি) ,যা ঐ আলেম ওলামাদের আধ্যাক্তিক জ্ঞানের অভাবে হচ্ছে। গাউসুল আ'যম হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (কঃ) এর কালামকে অসম্মান করার কারণ্বে অলীয়ে কামেল শায়খ সানাআলীর বেলায়ত চুত্যি ঘটেছিল, অনুরূপভাবে গাউসুল আ'যম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ) কে অসম্মান করার কারণে শাহানগর নিবাসী প্রখ্যাত আউলিয়া বাহারুল্লা শাহ এর বেলায়ত চুত্যি ঘটেছিল [বাহাজাতুল আসরার ও আয়নায়ে বারী ]। আল্লাহ তা'য়ালা আমাদেরকে তাজধারি দুই গাউসুল আ'যম এবং উনাদের আওলাদ,এছাড়া আল্লাহ তা'য়ালার সকল আউলিয়া দেরকে যথাযত সম্মান করার তওফিক দান করূক আমিন।