"মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ ",আতুরার ডিপো হাসেম বাজার শাখা। অস্থায়ী ঠিকানাঃখালেদা-মাহমুদা ম্যানশন,সঙ্গীত রোড,পাঁচলাইশ,চট্ট্রগ্রাম. আলাপনী-০১৮৩৮৬৩৭৬৯৮।ই-মেইলঃhoqcommity@gmail.com।

মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের নাম পূর্ব নাম 'মাইজ পাড়া' থেকে কি করে মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফে পরিণত হল?




মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের নাম পূর্ব নাম 'মাইজ পাড়া' থেকে কি করে মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফে পরিণত হল?
'মাইজভাণ্ডার দরবার ' এলাকার পূর্বে নাম ছিল 'মাইজপাড়া', সেখানে থেকে মাইজ শব্দ টি এসেছে,এখানে ;ভাণ্ডার; কেন যুক্ত হল,হাদিসে পাকে দেখতে পাই (হযরত ওক্ববাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলেছেন, হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন— নিশ্চয় আমাকে পৃথিবীর সমস্ত ধন-ভান্ডারের চাবিগুচ্ছ দেওয়া হয়েছে।" {বোখারী শরীফ ৮ খণ্ড, ৭৬ অধ্যায়, ৪৩৪ নং হাদিস)) । ভাণ্ডার শব্দের ক্রিয়ামূল এসেছে আরবি থেকে মাফাতেহ ও মাকালিদ, এ দুটির অর্থ চাবি,মাফাতেহ শব্দের অর্থ ইলমের ভাণ্ডার আর মাকালিদ অর্থ ধন ভাণ্ডার, আবার এই দুই শব্দের মাফাতেহ ও মাকালিদ প্রথম টির প্রথম ও শেষ শব্দ মিম ও হা, আবার মাকালিদ এ মিম ও দাল,এই চার শব্দে হয় মুহাম্মদ যাতে স্পষ্ট চাবি ই হচ্ছে স্বয়ং মুহাম্মদ দঃ ,এদিকে কুরানে আল্লাহ বলেছেনঃ [“তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা আছে , তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না ; কিন্তূ তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না ; কিন্তূ তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে”। (আনআম , ৬: ৫৯)]
এতে স্পষ্ট আল্লাহর সব কিছুর মুল এর চাবি হচ্ছে মুহাম্মদ দঃ আর ভাণ্ডার শব্দের দুটি অর্থ পাওয়া যায় যা হচ্ছে ইলমের বা জ্ঞানের ভাণ্ডার আর ধনের ভাণ্ডার। উক্ত দুই ভাণ্ডার রাসুলুল্লাহের তরফ থেকে গাউসুল আযম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী কঃ (বেলায়তের­ বিশেষ সম্মানি তাজ ) লাভ করেছেন রাসুলুল্লাহের পক্ষ থেকে, যা হযরতের মুখের বাণীঃরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার হস্ত মুবারকে দু'টি 'তাজ' ছিল একটি তাজ আমার মাথায় পড়িয়ে দেন,অপরটি, আমার ভাই পিরানে পির শায়খ আব্দুল ক্বাদের জিলানী সাহেবের মাথায় পড়ানো হয় [জীবনি ও কেয়ামত গ্রন্থ ,বেলায়তে মোতালাকা সহ বহুল তথা সুত্র বর্ণিত]।
ইমামে আহলে সুন্নাত শেরে বাংলা রঃ উনার কসিদা তে, ৮ম পঙক্তির উচ্চারণঃ " তা-জে দো-বূ-দাহ বদন্তে সরওয়ারে পায়গাম্বঁরা+এক নেহা-দাহ্ বর সরে শা-হ আহমাদুল্লাহ্ কে-গুমাঁ-"।৮ম পঙক্তিরঅনুবাদঃ "পয়গাম্বরকুল সরদার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার পবিত্র হাতে (পরস্পর সমকক্ষ স্বতন্ত্র দুই গাউসুল আ'যমের জন্য) দু'টি তাজ বা মুকুট ছিল;তাম্মধ্যেকার একটি নিঃসন্দেহে হযরত শাহ আহমাদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহ তা'আলা আনহু'র শির মুবারকে স্থাপিত [দিওয়ানে আজিজ ও বেলায়তে মোতালাকা] ।অতএব সহজেই অনুমেয় মাইজ পাড়া নামক স্থান টি রাসুল দঃ হতে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ 'বেলায়তে ওজমা' গাউসে আযমিয়ত ও কুতুবিয়ত মর্যাদার কারণে স্থানটি হযরতের মর্মে মাইজভাণ্ডার শরীফে পরিগণিত হয়েছে।

ফচ্ছে শীচ-খাতেমুন অলদ-খাতেমুন ওলী/বেলায়ত (গাউসুল আ'যম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী কঃ)

গাউসুল আ'যম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী কঃ এর ব্যাপারে গাউসুল আ'যম হযরত সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী কঃ এর রুহানি সন্তান "মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী রঃ" এর রচিত "ফচ্ছুল হেকম" নামক কিতাবের শেষ ভাগে উল্লেখ করেছেন "মানব জাতির মধ্যে হযরত শীচ আঃ" এর অনুসারী ও তাঁর ভেদাভেদের ধারক ও বাহক এক ছেলে ভূমিষ্ট হবেন।এরপর এমন মর্যাদা সম্পন্ন কোন ছেলে আর জম্মগ্রহণ করবে না।তিনিই খাতেমুন অলদ (ইবনুল আরাবির ভাষায়ঃ 'অলদ' ঐ ব্যাক্তিকে বলে,যেই ব্যাক্তি পিতার গুপ্ত রহস্যের হামেল বা বাহক- "আল অলদু ছিররুন লে আবিহে") হবেন [ফচ্ছুল হেকমঃফচ্ছে শীচ ৯৭ পেইজ]।
তজকেরাতে ফতুহাতে মক্কীর ২১ পেইজ ৭৩ অধ্যায় তে শায়খে আকবর কঃ বলেন," রাসুলুল্লাহর শ্রেষ্ঠ বেলাছতী বা উত্তরাধিকারীত্ব হল খাতেমুল বেলায়ত; এই খতম শেষ দু প্রকার।
"প্রথমঃহযরত ঈসা আঃ এক নম্বর বা শ্রেষ্ঠ।যেহেতু তিনি রেসালত ও বেলায়তের যুক্ত অধিকারী।ইনি সমস্ত বেলায়তের খাতেম এবং কেয়ামতের শেষ নিদর্শন।শেষ জমানাতে তিনি প্রকাশ (আগমন করবেন) হবেন"।
খাতেমুন অলদ/খাতেমুন অলীর দর্শন-"দ্বিতীয়ঃ বেলায়তে মোকাইয়েদার মোহাম্মদীর খাদেম।ইনি বংশশত ও দেশগত হিসাবে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হয়ে প্রকাশ হবেন।৫৯৫ হিজরী শনে আমার সঙ্গে উনার সাক্ষাৎ হয়। উনার শরীরস্থ মোহতে বেলায়তের চিহ্ন তিনি আমাকে দেখান।উনার খোঁদায়ী রহস্যপূর্ণবাণী সাধারণ লোকেরা স্বীকার করবে না।যদিও উনার খাতেমে বেলায়তের চিহ্ন সাধারণ লোকের চক্ষুর অন্তরালে তথাপি আমার জামানাতেও তিনি বিদ্যমান আছে"।
"এই হিসাবে খাতেমুন আউলিয়া ঐ সময় থেকে আউলিয়া যে সময় হযরত আদম আঃ পানি ও মাটির সাথে মিশ্রিত ছিলেন "[ ফচ্ছুল হেকম ৯৩ পেইজ]।
"খাতেমুন আউলিয়া রাসুলুল্লাহের অলীয়ে ওয়ারিস হবে।খাতেমুন আউলিয়া রাসুলুল্লাহের বিভিন্ন রূপের মধ্যে শ্রেষ্টতম রূপ"[ ফচ্ছুল হেকম ৯৩ পেইজ]
"বুজুর্গি হিসাবে উনিই শ্রেষ্ঠ যিনি-নিসবতাইনে আদ'মী অর্থাৎ আগত বিগত জমানার অবস্থার বেষ্টনকারী হন।কামালিয়তের বা বুজুর্গির কোন প্রশংসা উনার বুজুর্গিতে বাদ পড়ে না,যদিও উনার এই গুণাবলী বাইরের দৃষ্টিতে বা বিচার বুদ্ধিতে অথবা শর আ মতে ভাল বা মন্দ।এই সর্ববেষ্টনকারী বেলায়ত "আল্লাহ" নাম বিশিষ্ট নামধারী অলীউল্লাহের জন্য নির্ধারিত" [ফচ্ছুল হেকম ১১১ পেইজ]
এতে প্রমাণিত "এই খাতেমে বেলায়তে মোকাইয়েদায়ে মুহাম্মদি খাতেমুল অলদ বা বেলায়ত"।যেহেতু এই ব্যাক্তির ব্যাক্তিত্বে বেলায়তের সর্বোচ্চ বেলায়ত মর্যাদা বা যোগ্যতা সমাবেশিত বা প্রকাশ হওয়ার ফলে এই " এস্তেহকাকে অজুদী" বা ব্যাক্তিত্ব,প্রকাশ হওয়ার জন্য আর কিছু অবশিষ্ট নেই। কাজেই তিনি খাতেমুল অলদ।
খাতেমুল অলদের বৈশিষ্ট্যঃ
"এই ছেলে অব্যবহিত পূর্বে উনার এক বোন জম্মগ্রহণ করবেন।উনার জম্ম চীন প্রান্তে হবে।উনার ভাষা স্থানীয় হবে।অতঃপর নর-নারীর মধ্যে বন্ধ্যারোগ সংক্রামিত হবে।জম্ম প্রজনন ব্যতিতই বহু বিবাহের আধিক্য হবে।মানবজাতিকে তিনি আল্লাহর দিকে আহব্বান জানাবেন কিন্ত সন্তোষজনক সাড়া পাওয়া যাবে না।উনার এবং সে যুগের মুমিন দের তিরোধান এর পর মানব স্বভাব চতুষ্পদ পশুর ন্যায় স্বভাবে পরিণত হবে।হালাল,হারাম পরিচয় করবে না।ধর্ম ও বিবেচনা হতে দূরে সরে প্রকৃতি ও প্রবৃত্তির নির্দেশে কামস্পৃহা চরিতার্থ করতে মশগুল থাকবে" [ফচ্ছুল হেকম ৯৩ পেইজ]।
উপরোক্ত ভবিষ্যৎবাণী গাউসুল আ'যম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী কঃ প্রতি/দিকে ইঙ্গিত।কারণঃ
১।হযরত শীচ আঃ আহমদিয়ুল মশরব নবী ছিলেন এবং গাউসুল আ'যম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী কঃ ছিলেন আহমদিয়ুল মশরব ওলীউয়ুল্লাহ।
২। উনার জম্মের পূর্বে এক বোনের জম্ম হয়।
৩। উনার জম্মস্থান কে চীন প্রান্ত বলা হইছে কারণ, হযরত শায়খ মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী রঃ এর যুগে এই অঞ্চল চীনা বংশধরদের শাসনাধীন ছিল { এই অঞ্চল ভারতীয় উপমাদেশ সাথেই ছিল,যেহেতু ভারত-পাকিস্থান একত্র ছিল,আর ভারতীয় উপমহাদেশ চীনের প্রান্তেই অবস্থিত}।
৪।উনার ভাষা স্থানীয় ছিল।
৫।উনার যুগে জম্মনিয়ন্ত্রণ ওবন্ধ্যাকরণ পদ্ধতি পৃথিবীতে প্রচলিত হয়।
৬।তিনি মানবজাতি কে জাতি-ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে তৌহিদ ও রুহানিয়তের দিকে আহব্বান করেন।
৭।জগতবাসী উনার আহব্বানে ব্যাপক ও সন্তোষজনক ভাবে সাড়া দিতে হৃদয়ঙ্গম করতে ও সাড়া দিতে সক্ষম হয় নি।
৮।উনার পর জগতবাসী ব্যাপক ভাবে ধর্ম ও বিবেক রহিত হয়ে প্রাণী জগতের অনুরূপ জীবন যাপন করতে দ্বিধাবোধ করছে না।বরং ধর্ম বিবর্জিত জীবনধারা নীতি হিসাবে গ্রহণ করছে।যা ন্যায়নীতি ,সাম্য ও দয়া বহির্ভূত।
৯।উনার জম্মের সময় উনার সম্মানিত পিতা স্বপ্নে দেখেন" তোমার ঘরে আমার মাহবুব বিকাশ লাভ করেছে।আমি তাঁর নাম আমার 'আহমদ' নাম আল্লাহ যুক্ত করে 'আহমদ উল্লাহ ' রাখলাম।
১০।তিনি ছিলেন বেলায়তে মোহাম্মদীর সূক্ষ্ণত্ব স্থুলত্বের সমাবেশকারী।
১১।তিনি 'খাতেমুন বেলায়ত' কারণ, খাতেমুন্নবি দঃ এর আদর্শ সুন্নতের অনুসরণে উনার ওফাতের আগে পুত্র সন্তান রেখে যান নি।[খাতেমুন এই বিষয়টা অনেকে ভুল বুঝে। খাতেমুন বেলায়ত দিয়ে বুঝায় যিনি পূত্র সন্তান রাখেন না। যেরুপ রাসুল খাতেমুন নবী, কিন্তু রাসুল দঃ খাতামুন নবিও কারণ উনার পর আর নবী আসবে না।তাই রাসুল দঃ খাতেমুন এবং খাতামুন]
১২।১১৪৩ হিজরী সনে হযরত আব্দুল গণি নাবলুসি রঃ এর ওফাতের পর নৈতিক অধঃপতন যুগ শুরু হয়। ১২৪৪ হিজরী সনে গাউসুল আ'যম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী কঃ আবির্ভাবের পর উনার বিশ্ব ত্রাণ কর্তৃত্বসম্পন্ন গাউসিয়তের প্রভাবে কৃত্রিমতা,চলচাতুরী প্রভৃতি দূর হয় ও নৈতিক ধর্মের পুনঃজীবন সম্ভব হয়।
১৩। তিনি হলেন "নিসবতাইনে আ'দমী" অর্থাৎ তিনি পূর্ব ও পরবর্তী ধর্ম বা কর্মপন্থার বেষ্টনকারী হিসাবে 'বেলায়তে মোহিত' বা 'বেলায়তে মোতালাকার' মালিক।
উপরোক্ত আলোচনা হতে নিঃসন্দেহে প্রতীয়মান যে, গাউসুল আ'যম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী কঃ হলেন হযরত মুহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী রঃ এর কর্তৃক বর্ণিত, খাতেমুন অলদ-খাতেমুন ওলী/বেলায়ত এবং গাউসুল আ'যম।

গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারি কঃ এর কেরামত পর্বঃ ১০

 আল্লাহ তা'য়ারা রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হওয়া মহান হযরতগণ জীবিত ও আল্লাহর পক্ষ থেকে জীবিকাপ্রাপ্ত।এ
বিষয়ে আল কুরআনুল করীমের বিভিন্ন আয়াতে সুস্পস্ট সাক্ষ্য বিদ্যমান,ইরশাদ করেন,
وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَكِنْ لَا تَشْعُرُونَ )
"আল্লাহর পথে যারা নিহত হয়, তাদের মৃত বল না। তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝতে পার না।" (সুরাঃ-বাকারা,আয়াতঃ-১৫৪) এছাড়া অন্য আয়াতে বর্ণীত,
لاَ تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاء عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ
'যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছেন,তাদের কখনো মৃত ধারণা করোনা,বরং তাঁরা তাদের প্রতিপালকের নিকট জীবিকা(রিযিক)-প্রাপ্ত।(সুরাঃআল ইমরান,আয়াত-১৬৯)।ইসলামের বহিঃশত্রু দমনের যুদ্ধে নিহত শহীদগণ যেমন সুক্ষ্ম জীবন লাভ করেন,অনুরুপ প্রভুর মিলন পথের প্রতিবন্ধকরুপি মহাশত্রু কুপ্রবৃত্তির বলিদান তথা আল্লাহর ইচ্ছায় উৎস্বর্গিত প্রেমের মরা মরেও অমর।মাটি,পানি ও আগুন তাঁদের দেহ বিনাশ করে না,মহানবি দঃ কোন এক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনকালে সাহাবিদের সম্বোধন করে বলেন,رجعنا من الجهاد الأصغر إلى الجهاد الأكبر,قدمتم خير مقدم قدمتم من الجهاد الأصغر إلى الجهاد الأكبر مجاهدة العبد هواه
তোমরা খুব উত্তম স্থানেই ফিরে এসেছো তোমরা ছোট জিহাদ থেকে বড় জিহাদের দিকে ফিরে এসেছো আর তা হলো অন্তরের সাথে জিহাদ করা।আমরা ছোট জিহাদ থেকে বড় জিহাদের দিকে ফিরে এসেছি।” (বায়হাকি,দাইলামী, কানযুল উম্মাল, জামউল জাওয়ামি)
জিহাদে আকবর বা বড় যুদ্ধ তথা নফসের সাথে যুদ্ধ করে আত্মশুদ্ধির শিক্ষা দেয় ইসলাম।এ যুদ্ধের সমরাস্ত্র রূপে আল্লাহ মু'মিন্দের কে দু'টি জিনিষ দান করেছে।যথা ক- আল্লাহর জালালতের ভীতি,খ- নফসকে স্বীয় প্রবৃত্তি থেকে নিবৃত্তি করা।
وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى
"পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল-খুশী থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে" (সুরাঃনাযিয়াত,আয়াত-৪০)
فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى "তার ঠিকানা হবে জান্নাত।"সুরাঃনাযিয়াত,আয়াত-৪১)
قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا "যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়।"(সুরা-শামস,আয়াত-৯)
এ সফলকাম অমর সত্তাদের অমরত্বের নিদর্শন প্রদর্শন পূর্বক আল্লাহ তা'য়ালা দ্বীনে ইসলামের সভ্যতার প্রমাণ জোরদার করেন যুগে যুগে।
নিম্নে এ ধরণের কয়েকটি ঘটনা উপস্থাপিত হলঃ
১। হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (ক)'র বিশিষ্ট খলিফা শাহসুফি মাওলানা সৈয়দ আব্দুস সালাম ভূজপুরি (রাঃ),৪ পৌষ ১৯৪৯ সালে ইন্তেকাল করেন।তাকে ইদলপুর প্রসিদ্ধ বুজুর্গ বোডা শাহের মাজারের পাশে দাফন করা হয়।ইন্তেকালের প্রায় দেড় বছর পর তিনি বোডা শাহের সাথে তাঁর মশররবের মিল হচ্ছেনা বলে নিজ পুত্র মাওলা সৈয়দ মঞ্জুরুল হক ও মাওলানা সৈয়দ হাবিবুল হক সাহেবদ্বয় কে স্বপ্নে তাবুত অন্যত্র স্থানান্তরের নির্দেশ দেন।স্বপ্নাদিস্ট হয়ে তাঁরা গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের সাথে পরামর্শ করে তাবুত উত্তোলন করেন।হাজার মানুষের উপস্থিতিতে কাফন খুললে দেখা যায়,পূর্ণিমার চন্দ্রবৎ মুবারক হতে মুক্তাঁর ন্যায় বিন্দু বিন্দু ঘর্ম নির্গত হচ্ছে আর ওষ্ঠদ্বয় নড়ছে।তাবুত ও কাফন ও শরির মুবারক একটুও পরিবর্তন হয় নি বরং পূর্বের অপেক্ষা অধিক উজ্জল ও সুঘ্রানময় হয়েছে।অতঃপর তাঁকে বর্তমান মাজারস্থ স্থানে দাফন করা হয়।(রত্ন বিন্দু ২য় প্রকাশে গ্রথিত গ্রন্থকার মহোদয়ের সংক্ষিপ্ত জিবনি কিতাব হতে নেওয়া)
২।হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (ক)'র ভক্ত জনাব সৈয়দ আহমদ হুসাইন রহঃ ৩ জানুয়ারি ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করলে ফটিকছড়ির নানুপুরস্থ আজিজুল্লাহ দারগা মসজিদ কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।২৭ ডিসেম্বর ২০০৪ খিস্টাব্দে মৃত আবু আহমদের কবর খননকালে মাটি সরে পড়লে ৩৭ বছর পূর্বে দাফনকৃত আহমদ হুসাইন সাহেবের পায়ের দিকের তুষার শুভ্র কাফন দেখা যায়।এ ঘটনা কাফনের ছবিসহ জাতীয় ও স্থানিয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে- (দৈনিক ইত্তেফাক ২৮ ডিসেম্বর ২০০৪,দৈনিক চট্টগ্রাম মঞ্চ ২৯ ডিসেম্বর ২০০৪)
৩। কুতুবুল আকতাব গাউসুল আ'যম শাহসুফি সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাভান্ডারি (ক)'র মেয়ের ঘরের নাতি শাহজাদা সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম প্রকাশ গায়েবিধন মাইজভাণ্ডারী (ক)'র মুরিদ মাওলানা আব্দুর রশিদ মাইজভাণ্ডারী রহঃ ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।রাউজান, নোয়াপাড়া ইউনিয়নের শেখ পাড়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।বিগত ২০/০২/২০১০ খ্রিস্টাব্দের দিকে তাঁর মাজার পুকুরে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে নিজ পুত্র এডভোকেট আতহার মিয়াকে মাজার সংস্কারের জন্য বার বার স্বপ্নাদেশ করেন।২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ আতহার মিয়া সংস্কারের জন্য শ্রমিক নিয়োগ করেন।পরদিন ২৭ ফ্রেবুয়ারি শ্রমিকগণ খনন কাজ শুরু করেন এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি মাটি সরাতে গেলে তাবুতের কিছু অংশ ভেঙ্গে যায় এবং এতে দুই যুগাধিক পূর্বের সাদা কাফন অবিকৃত দেখা যায়।ঘনিষ্ট আত্মীয় ও সাংবাদিকদের কৌতূহল বশরঃ কাফন খুলে শরির ও চেহেরা সজীব দেখতে পান,স্থানীয় হাজার হাজার লোক ও বহু সাংবাদিক ঘটনাটি দেখতে ভীড় জমান।বহু জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিকে তাবুতের ছবিসহ ঘটনাটি সবিস্তারে প্রকাশিত হয়।(দৈনিক পূর্বকোণ ১ ও ২ মার্চ ২০১০,দৈনিক ইনকিলাব ১ মার্চ ২০১০,দৈনিক চট্টগ্রাম মঞ্চ ১ মার্চ ২০১০ ও দৈনিক ডেসটিনি ১ মার্চ ২০১০)
৪।ফটিকছড়িস্থ কাঞ্চনপুরের এক বারই মনোপ্রানে হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (ক)'র ভক্ত অনুরক্ত ছিলেন।জীবদ্দশায় প্রায়শ গাউসুল আ'যমের দরবারে হাদিয়া-তোহফা আনয়ন করতেন। ওই হিন্দু বারই মরণকালে স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্পষ্ট উচ্চারণে কালেমায়ে তৌহিদ পাঠ করেন।আত্মীয়-স্বজন রাম-রাম বলে তাঁকে ঘরের বাইর করে দিল।চুপ-চুপ করে ঘটনাটি চুপিয়ে রাখল।কিন্তু ওই আদি সৌভাগ্যশীল বারই তৌহিদের বাণি উচ্চারণ করতে করতে মৃত্যু বরণ করল।হিন্দু ধর্মের রীতি অনুসারে তাঁকে চিতায় নিয়ে লাকড়ী ও পরিমাণ মত তৈল-ঘৃত দিয়ে আগ্যন দিল।পরস্ত হিন্দুরুপি ওই আকৃতি ও প্রকৃতিগত মু'মিনের ত্বকের উপরের অংশ কিছু কিছু দাহ হলেও বক্ষে দাগ মাত্র লাগে নি।তৈল-ঘি দ্বিগুণ বাড়িয়েও জ্বালাতে ব্যর্থ হয়ে লাশ ধুরং নদীতে ফেলে দিল।ওই শবদেহ ভাসতে ভাসতে এক জায়গাতে গিয়ে আটকে রইল।স্থানীয় বাসিন্দারা গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (ক) কর্তৃক স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে অথবা পুলিশ লাশ তুলে নিয়ে গোসল ও জানাজা শেষে দাফন করেন।(আয়নায়ে বারি ১ম প্রকাশ ২৩৪-২৩৭ পৃষ্ঠা)
৫।ফটিকছড়ি নিশ্চিন্তআপুর নিবাসী বৌদ্ধ ধননজয় হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (ক) এরপরম ভক্ত ছিলেন।তিনি ইসলাম ধর্মে বারবার দীক্ষিত হবার জন্য অনুরোধ করলেও হযরত আকদছ (ক) সম্মতি না দেওয়ায় মনস্কাম পূর্ণার্থে হযরতের পরম স্নেহভাজন পৌত্র অছিয়ে গাউসুল আ'যম শাহসুফী সৈয়দ দেলাওয়ার হুসাইন মাইজভাণ্ডারী (ক) কে সুপারিশের জন্য অনুরোধ করেন। অছিয়ে গাউসুল আ'যম হযরতের খিদমতে ধননজয়ের আর্জি পেশকরলে তিনি ধননজয় কে তালাশ করেন।ধননজয় 'হুজুর দাস হাজির' বলে হযরতের সম্মুখে করজোড়ে বসে পড়েন।হযরত (ক) তাঁকে বলেন,"তুমি তোমার ধর্মে থাক,আমি তোমাকে মুসলমান করলাম" বললেও তিনি বসে রইলেন।হযরতের খাদেম মৌলভি আহমদ ছফা কাঞ্চনগরী (রা) তাঁকে পেছন হতে ইশারায় ডেকে নিয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে,তাকে হাকিকতে মুসলমান করা হয়েছে।এরপর হতে তিনি প্রায় সময় হযরতের হুজরায় তাঁর ছোহবতে সময় কাটাতেন।হযরতের বেছাল শরিফের পর বাবাজান কেবলার হুজরাতে প্রায় রাত কাটিয়ে দিতে।তার স্ত্রীর বর্ণনামতে,মৃত্যুর পর তাঁকে অনেকে স্বশরিরে বিচরণ করতে দেখেছেন।( হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (ক) জীবনি ও কেরামত ষষ্ঠ প্রকাশ,১৯৮৫,১৯২ পৃষ্ঠা)।
উপরিউক্ত বর্ণনামতে সুস্পষ্ট যে,গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (ক)'র প্রতি ভক্তি-বিশ্বাস ও তাঁর প্রবর্তিত তরিকার অনুসরণে মরেও অমর হয় এমন সফল মু'মিন তথা প্রকৃত সুন্নি-মুসলমান হওয়া যায়।যুগ-যুগান্তরে মাইজভাণ্ডারী আশেক-ভক্তের দেহ অবিকৃত থাকে।মাইজভান্ডারি তরিকার সভ্যতার অনুকুলে ঐরূপ জ্বলন্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কিছু সংখ্যক দুর্জন এই তরিকা ও এর অনুসারীদের বিপক্ষে অপপ্রচারে মেতে উঠেছে।একদিকে মাইজভাণ্ডারী আশেক-ভক্ত কাল-কালান্তরে কবরে অবিকৃত থাকার প্রমাণ মিলে,অপরদিকে নামকরা বহু পীর কে মৃত্যুর পর পচে যাওয়ার ভয়ে বরফ দিয়ে রাখতে হয়।এতে কি হক বাতিলের পরিচয় মিলে না? তবুও সত্য কে সত্য বলতে কেন এত দ্বিধা? মিথ্যাকে সত্য রূপে প্রতিষ্ঠার জন্য অপতৎপর মূল্যবান সময়ের কেন এ অপচয়? প্রশ্ন কয়টির সমাধানে দৈনিক জং পত্রিকার উদ্ধতিতে বিবৃত জার্মান চিকিৎসা বিজ্ঞানির মত কারো ঘুমন্ত বিবেক-কে নাড়া দেবে এ প্রত্যাশায় এ ক্ষুদ্র নিবন্ধের অবতারণা,আল্লাহ বুঝার তওফিক দান করুন। আমিন।{রেফারেন্সঃ শানে গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী 'রাদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু' প্রবন্ধ সম্ভার-১ ও উরসে হাদিয়ে যমান (রাদ্বি) স্মারক গ্রন্থমালা-২}।

গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারি কঃ এর কেরামত পর্বঃ ৯ (আয়নায়ে বারি)

<<<<বেছাল শরিফের পর সশরীরে দর্শন দান হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারীর>>>>
কাঞ্চনপুর নিবাসি মুন্সি ছমি উদ্দিন তম্বয় মাহমুদ বলেন,আমার মামা মুন্সি লুৎফ আলী সাহেবের ওয়াহেদ আলী নামক এই ভৃত্য ছিল ।একদা তাঁর কঠিন জ্বর এসেছিল ।অসুস্থাবস্থায় আমি প্রায়শ তাকে দেখাশুনা করলাম।১৩২৩ হিজরির ২৩ জিলহজ্জ গাউসে পাক 'রাদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু'র বেছাল শরিফের সাতাশ দিন পরে তার জ্বর আসল।আমি মানবীয় প্রয়োজনীয়তা মিটানোর জন্য বাইরে গেলাম।শৌচকাজ সেরে ঘরেরে দিকে আসছি এমন সময় দেখলাম যে,হযরত গাউসে পাক 'রাদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু' রাস্তায় দাড়ানো এবং হযরতের খাস খাদেম মৌলবি আহমদ ছফা সাহেবও তাঁর চাদর মুবারক্ত নিয়ে পিছনে দাড়িয়ে আছে।আমি গাউসে পাক 'রাদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু'র সমীপে 'সাজদায়ে তাহিয়াহ' অভিবাদনের সাজদান সমাপনান্তে ঘরে তাশরিফ আনয়নের আবেদন জানাই।তিনি বললেন,'ঘরে গিয়ে ওয়াহেদ আলীর নিকট আগুন জ্বেলে দাও তার খুব শীত অনুভব হচ্ছে।আমি আদেশ পালনার্থে ঘরে গিয়ে কাজ সেরে শীঘ্রই যখন বেরিয়ে আসলাম তখন হযরত 'রাদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু'কে দেখতে পেলাম না।পরে অনেক খুজেও কোথাও নাগাল পাইনি।
আয়নায়ে বারি (মূল উর্দু শের) তে উল্লেখ, " আলো ছটালো জগৎ পরে যেই অবধি মোর সুলতান,
তপন সদৃশ উদ্ভাসিত চৌদিক ব্যপিত রৌশন।
বহু পুষ্প ফুটেছে জগতের এ গুলশান মাঝে,
জগৎ বাগে দেখনি কোথাও তবরুপ গুণ আনন।
যুগে যুগে কত বাদশাহ করে হেরে গেল বাদশাহী,
ভবালয়ে কভু কি কেউ হয়েছিল তোমার মতন?
জগত মাঝে কেউ কি কভু বুঝিতে পারে তব শান?
সুমহান আরশ তব পদব্রজে হয়েছে যে যিশান।
লংঘিতে নাহি পারে কেউ ঘাড় ফিরায়ে তব ফরমান,
আকাশ-পাতাল ব্যাপী সর্বত্রজারী সে ফরমান।
তোমার প্রেমের রক্তিম চিহ্ন হৃদে আমার করেছি ধারণ,
বক্ষ হল লোহিত পুষ্প আর যে দীপ্ত তপন।
হুর গেলমানের গলার হার প্রতি বিন্দু অশ্রুর,
মণি-মুক্তার খনি যবে হয়েছে তব প্রেমে এ নয়ন।
শহীদে খঞ্জরে আবরুপ তব আছে কি মরণে ভয়?
জানের বদলায় যদিরে পায় তব রূপ প্রাণের প্রাণ।
কৃপা বিতরে হে গাউসে ধন দাও এবে দর্শন দান,
অন্বেষীনে তোমায়েবে মকবুল হয়েছে হয়রান।"
সুবাহানাল্লাহ!!!!!!!। গাউসে পাক 'রাদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু'র উচ্চ শান ও মর্যাদা এতই বিস্তৃত যে,যদি প্রতিটি বৃক্ষ কলম হয় এবং তাঁর পাতা সমূহ কাগজ হয় আর সকল প্রাণী যদি লেখক হয়ে আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত লিখতে থাকে তবুও সহস্রাংশের একাংশ লিখতে সক্ষম হবে না। আয়নায়ে বারি (মূল উর্দু শের) তে উল্লেখ, " সহস্র শ্রেষ্ঠত্বের প্রথম অনুচ্ছেদের প্রথম অণু যদি গণে,শত প্রলয় বহে যাবে হবে নাকো শেষ তাহা গণে।"

গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারি কঃ এর কেরামত পর্বঃ ৮ (আয়নায়ে বারি)

<<<< হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারীর খাদ্যে প্রাচুর্যের বয়ান>>>>>
রচয়িতাঁর (আয়নায়ে বারির লেখকের) মামা ,জনাব মহাত্মন নজমুল হক ওয়াদদীন আহমদ সাহেব 'রহমতুল্লাহে আলাইহি'র পুত্র হাজিউল হারামাইনিশশরিফা
ইন জনাব মুহাম্মদ বশিরুল্লাহ সাহেব কাঞ্চনপুরি বর্ণনা করেন যে,একদা আমি এবং আমার জ্ঞাতি ভাই এরশাদুল্লাহ মিয়াজি উভয়ে ভাই মুহাম্মদ মুফিদুল্লাহু মিয়াজির শুভবিবাহের কথাবার্তার জন্য ঈসাপুর পরগণার মুহাম্মদ আরহামুল্লাহ খোন্দকারের বাড়ীতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হল।আমাদের সঙ্গের কতেক ব্যাক্তি পূর্বে চলে গেলেন।তাদের সাথে কথা ছিল,দরবারে গাউসিয়ায় গিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করবেন।এজন্য আমাদেরকে দরবার শরিফ হয়ে যেতে হল।আমরা যখন মাইজভান্ডার শরিফ গিয়ে পৌঁছলাম তখন তাদেরকে সেখানে পেলাম না। তখন যেহেতু রাত হয়ে গিয়েছিল তাই আমাদেরকে বাধ্য হয়ে দরবারেই নিশি যাপন করতে হল।সে সময় হযরত গাউসে পাকের আম্মাজান জিবিত ছিলেন।তিনি তাড়াতাড়ি খাদ্য রান্না করে খাদ্য ভর্তি একটি ও শূন্য দুইটি বর্তন এনে আমাদের সামনে রাখলেন।আমাদের ক্ষুধা ছিল প্রবল কিন্তু বর্তনে আধা সের চাউলের অধিক পরিমাণ খাদ্য হবে না।আমরা উভয়ে এক বর্তনে এবং হযরত গাউসে পাক 'রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু' অন্য বর্তনে একই দস্তরখানায় বসে পড়লাম।তিনি নিজ পবিত্র হাএ আমাদেরকে খাদ্য বন্টন করে দিলান এবং নিজেও নিয়ে খেতে শুরু করলেন।যখন আমরা খেতে বসেছিলাম তখন মনে মনে ভাবতেছিলাম,এ খাদ্য আমার একার জন্যেও পর্যাপ্ত না।আল্লাহর কুদরতে আমরা তিনজনই পরিপূর্ণ তৃপ্ত সহকারে খেলাম,কিন্তু এরপর ও পূর্বৎ বর্তনে অবশিস্ট ছিল।বাস্তব পক্ষে প্রবৃদ্ধি ও প্রাচুর্য গাউসে পাক রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু'র দরবারে আবশ্যকীয় রীতি।এটা কখন ও বিদূরীত হয় না।আমরাতো সর্বদা দেখে আসছি যে,বিশজনের খাদ্যে চল্লিশ,পঞ্চাশ জন কে যথেস্ট হত।অনুরুপ প্রত্যেক কিছুতে এমন বরকত পরিদৃষ্ট,সুবাহানাল্লাহ ।
আয়নায়ে বারি (মূল উর্দু শের) তে উল্লেখ,
কুদরত রহস্যের বিকাশ গাউসে আ'যম আপনি হন।
নুরে ওয়াহদতের দর্পণ গাউসে আ'যম আপনি হন।
দয়া স্মারকের ভান্ডার গাউসে আ'যম আপনি হন।
প্রজ্ঞা প্রণালীর ঝর্ণা ,গাউসে আ'যম আপনি হন।
দানশীলতা আর উদারতার উৎস গাউসে আ'যম আপনি,
মঙ্গল ও প্রাচুর্য সবের খনি গাউসে আ'যম আপনি হন।
ধূলি পলকে স্বর্ণ হয় তব দৃষ্টির বরকতে,
হাকিকতের অকসীর নিশ্চয় গাউসে আ'যম আপনি হন।
তব হিম্মতে অণু আরশের তারকা হয়,
নিঃসন্দেহে সে হিম্মত সাগর গাউসে আ'যম আপনি হন।
আপনার দ্বারে এল যে অফুরন্ত দৌলত পেল সে,
আমার ধন আর দৌলত সব গাউসে আ'যম আপনি হন।
নেয়ামতের মালিক হয়,হলে তব শুভ দৃষ্টি,
দুই জাহান মম নেয়ামত গাউসে আ'যম আপনি হন।
যদিও মকবুল হীন হয় তব দরবারের ভিখারী সে,
দুই জগতের বাদশাহী গাউসে আ'যম আপনি হন

গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারি এর কেরামত পর্বঃ ৭ (আয়নায়ে বারি)

<<< হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারীর নামের বরকতে বিষধর সাপের আক্রমন থেকে মুক্তি >>>>>
গাউসুল আ'যম দরবারের শিষ্য কাঞ্চনপুর নিবাসি আব্দুস সুবহান নামক এক ব্যাক্তি বলেন যে,আমি প্রয়োজনীয় কাজে একদা জঙ্গলে গিয়েছিলাম।ফেরার
পথে একটি বিষধর বৃহতাকার সাপ রাগান্বিত হয়ে আমাকে দংশনের জন্য ফণা তুলল।আমার চতুষ্পার্শ্বে বন জঙ্গল হওয়ার কারণে পালাবার উপায় ও ছিল না।সাপটি এক অঙ্গুষ্ঠ দূরত্বে লেজের উপর খাড়া হয়ে রইলা।আমিও হুশহারা হয়ে রইলাম। পরিশেষ হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী 'রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু'র পাক নাম আমার স্মরণে আসলে,আমি বললাম, 'হে হযরত এই অসহায় অবস্থায় আমাকে প্রাণ নাশক খপ্পর থেকে রক্ষা করুন'। এটা বলা মাত্র সর্পটি মাথা নত করে জঙ্গলের দিকে চলে গেল।আমিও দ্রুত ওখান থেকে দ্রুত চলে এলাম।
আয়নায়ে বারি (মূল উর্দু শের) তে উল্লেখ, " গাউসুল আ'যম তব নাম অন্তরে যে নিল,যত বড়ই মঞ্জিল হোক আসান হল।গুপ্ত-ব্যক্ত শত্রু তাঁকে কবে যের করবে? সত্যান্তরে যে তোমার নাম জপকারি হল।দুই জগতের সমস্যা পলকে আসান হবে,তবরুপ রক্ষক ও মদদগারে যে স্মরণ করল।তোমার উচ্চ মর্যাদা সত্য মতে কে বুঝিবে? তবরুপ মর্যাদা আল্লাহ কাউকে নাহি দিল।পলকে ধবংসিবে জগত না হলে দৃষ্টি তব।জগৎ প্রাণ হও তুমি সারা জগৎ তব শরির তুল।ইহকালে পরকালে সমস্যা আছে কি তার?সাহায্যকারি যার তোমার মত মস্কিলকুশা হল।পাপের সাগরে কভু আমলের ডিঙ্গা ডুববে কি? দুই জগতে তবরুপ কান্ডারি যে পেল।তব দ্বারের মাটি স্বর্ণ থেকে মূল্যবান,কেন হবে তব দৃষ্টি যে আকসীর করল।গাউসুল আ'যম তুমি মকবুলের মুখতার,অন্তরে যে তব দ্বারে দাস সে মওলা সে হল

গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারি এর কেরামত পর্বঃ ৬ (আয়নায়ে বারি)

হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারীর নামের গুণে দুষ্ট জিনের কবল থেকে রক্ষা>>>>>
হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী 'রদ্বিয়াল্লাহ আনহু'র ভ্রাতুষ্পুত্র জনাম আব্দুল হাশেম (দাঃ বাঃ)বলেন,একদা আমি জ্বরের প্রকোপে অতিশয় দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম।আমার বড় ভাই জনাব শাহ গোলাম সুবহান সাহেব (দাঃ বাঃ) গরুর জন্য ঘাস কেটে এক স্থানে জমা রেখেছেন।অন্য লোকেন গরু এসে ঐ গুলো খেয়ে চলে গেল।এতে তিনি আমাকে সধমকে আচ্ছা বকা বকলেন।বোকা শুনে আমার রাগ আসল।আমাদের বাড়ির পশ্চিমে বিনাজুরি ছড়ির নিকটে ঝিলের মধ্যে সতেজ ও লম্বা ঘাস ছিল প্রচুর।বেলা ঠিক দ্বি-প্রহরে একটি বড় চুপড়ি ও কাঁচি নিয়ে ঘাস কেটে নিয়ে আসার জন্য ঐদিকে যাচ্ছিলাম।এমন সময় হযরত গাউসুল আ'যম 'রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু' হুজরা শরিফ থেকে দায়রা শরিফে তাশরিফ আনতেই আমাকে সম্মুখে ডাকলেন।আমি শীঘ্রই পদচুম্বন পূর্বক খেদমতে মশগুল হয়ে গেলাম এবং পাখা ঘুরাতে লাগলাম।কিছুক্ষণ
পর হযরত গাউসে পাক 'রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু' আমাকে তামাক সাজাতে বললে আমি পাখা অন্যজনকে দিয়ে হুজরা শরিফ থেকে তামাক সাজায়ে নিয়ে এলাম।হযরত 'রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু' হুক্কাতে তামাক সেবনে রত হলেন।আমি পাখাকারি ব্যাক্তিটিকে সতর্ক করে বললাম,খবরদার! আমি না আসা পর্যন্ত তুমি আমি পাখা ঘুরাতে থাকবে।একথা বলে সাজদায়ে তাহিয়াহ আদায় পূর্বক ঘাস কাটার জন্য বিলের দিকে চলে গেলাম।বিলে গিয়ে ঘাস কাটায় লেগে গেলাম।তখন দেখতে পেলাম আমি ঘাস কেটে টুকরিতে যতই জমা করি ঘাস কমতেই আছে।এভাবে কয়েক বার হলে ব্যাপারটি বুঝে আমি সতর্ক হলাম।এখানে এক দুষ্ট জিন সদা থাকে এবং মানুষকে কষ্ট দেয়।আমার কর্তিত ঘাসের হ্রাস যে,সে জিনের তিলিসমাতি,তা অনুধাবন করে বললাম।হে দুষ্ট তুমি গাউসুল্লাহিল আ'যমের সাথেও কি বেয়াদবি শুরু করলে? খবরদার পুনঃরায় যদি এমনটি করো তবে অবশ্যই তোমাকে সাজা পেতে হবে।একথা বলে আমি গাউসিয়তের তরবারি মনের হস্তে নিয়ে পূর্বের মত ঘাস কাটায় মগ্ন হলাম।এমনি মুহূর্তে ঐ জিন আমার এক প্রতিবেশীর আকৃতিতে দৃশ্যমান হয়ে আমাকে বলল, 'তুমি শমশীরে গাউসিয়া তথা গাউসিয়তের তলোয়ার হস্তে ধারণ করেছো, অন্যথায় তোমার সাথে মোকাবেলা করতাম।আমি তাঁকে গালমন্দ বলে যতটুকু ঘাস কেটেছি তা নিয়ে সেখান হতে ঘরের দিকে রাওয়ানা হলাম।আমি যে পথে সেথায় গিয়েছিলাম সে পথে তাঁর জোর-জবরদস্তির পূর্ণ সম্ভাবনা ছিল। আর ঐ জিন আমাকে উক্ত পথ হয়ে আসার পরামর্শ দিল।আমি সে রাস্তা ত্যাগ করে অন্য পথে আমার বাড়ির পার্শ্বের এক পুকুর পাড় দিতে আসতেছিলাম।এক মহিলা আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করল, 'আপনার পিছু পিছু শুকর আকৃতির এটা কি আসতেছে? এক কথা বলে মহিলাটি নিজ ঘরে চলে গেল।আমি ঘাসের টুকরি ওখানে রেখে যখনই পিছন ফিরে দেখলাম তখন কিছুই দেখতে পেলাম না।অতঃপর যখন ঘাসের টুকরির দিকে দেখলাম তখন দেখতে পেলাম,আমি যত ঘাস কেটেছিলাম এবং সে জিন যা চুরি করে রেখেছিল সবই এনে দিলামি এ ঘটনা দেখে ঘাসের টুকরি তুলে নিয়ে চলে আসার মনস্থ করলে দেখি,এটা,এতই ভারি হয়ে গেল যে,আমি উঠাতে পারছিলাম না,কোনমতে সেখান থেকে নিয়ে এক স্থানেরেখে পবিত্রার্জন পূর্বক শীঘ্রই গাউসে পাক 'রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু' খেদমতে উপস্থিত দেখতে পেলাম তিনি এখন ও আমার সাজিয়ে দেয়া তামাকটুকু সেবন করেই চলছেন।আমি যখন কদমবুসি করলাম তখন জিজ্ঞাসা করলেন, "ইনি কি বাঁচা মিয়া? আমি বললাম ।হ্যাঁ হুজুর! আমি বাঁচা মিয়া।" (হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী 'রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু' শাহ মুহাম্মদ হাশেম সাহেবকে বাঁচা মিয়া ডাকতেন)। উত্তর শুনে বললেন, "কোথায় গিয়েছিলে? এত ঘর্ম কেন আসল? " এ কথা বলে এরশাদ করলেন, 'হারামযাদা বৈরাগী আমার ছেলেকে কষ্ট দিতে চায়?" অতঃপর হযরত গাউসে পাক 'রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু' হুজরা শরিফে তাশরিফ নিয়ে গেলেন এবং উপস্থিত ভক্ত-অনুরক্তগণও চলে গেলেন।
আয়নায়ে বারি (মূল উর্দু শের) তে উল্লেখ, " দিল-ঈমানে যে আস্তানায় এসেছে,ধবংসকূপ থেকে সে আকাশে উঠেছে।
জগতে প্রসিদ্ধ হবে যে স্বচ্ছ অন্তরে,তোমার পাক নাম সদা মুখে রেখেছে।
জগতে তাঁর কি যে,আর ভয়-ভীতি? নিরাপদ দ্বারে তব আশ্রয় যে নিয়েছে।
দুঃখ কষ্টে যে নিয়েছে, তোমার নাম,তব কৃপাদৃষ্টিতে আনন্দ-প্রফুল্লতা পেয়েছে।
তোমার দরবারের আলীশান আদেশ,মানব-দানব সবার পরে জারী রয়েছে।
তোমারই হুকুম আল্লাহর নির্দেশ জগতে,তবরূপ কোন বাদশাহ নাইকো আছে।
শাহা তব দ্বারে করেছে যে আহাজারি,সকল কর্মে সে সফলকাম হয়েছে।
মকবুল বেদিল তব হই যে,প্রাণহারা তব সত্ত্বা প্রাণের প্রাণ "

গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারি এর কেরামত পর্বঃ ৫ (আয়নায়ে বারি)

--->হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারীর নাম স্মরণে বাঘের কবল থেকে মুক্তি>>>>>
এক ব্যাক্তি,বরিশাল নাকি ফরিদপুর নিবাসি ছিল অধমের (লেখকের)এ মুহূর্তে সঠিক মনে নেই।সে নিজেই হযরত হুযুর পুর নুরে গাউসিয়ার দপ্তর খানায় বসে ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন।এ নগণ্য (লেখক) অন্যান্য সাথীসহ শুনতে ছিলাম।বললেন,” আমি বহুদিন ধরে আস্তানা শরিফ চুম্বন ও ফায়েজপূর্ণ,গাউসিয়তের স্মারক দরবারে পাকে ললাট ঘর্ষণের আকাংখায় ছিলাম।কিন্তু বিশ্বাসঘাতক দুনিয়ার সম্পর্ক ও ক্ষণস্থায়ি কালের ঘূর্ণিপাকে আস্তানা শরিফে উপস্থিত হতে পারি নি।দীর্ঘ সময় ও কাল পরে দরবারের প্রেম মত্ততায় এত বেশি আকর্ষিত হলাম যে,ক্ষণিকের জন্যও নিজ নিবাসে অবস্থান সম্ভব হল না।
পরিশেষে মিলন উম্মাদনায় অস্থির হয়ে পতঙ্গের ন্যায় সফরের পথ ধরলাম।আপন সফরের চতুর্থ দিনে আজ গাউসুল আ’যমের কৃপা দৃষ্টির বরকতে এখানে এসে পৌঁছি।আমি আপন ঠিকানা থেকে বের হয়ে ভালবাসার বাহনে চড়ে পথ অতিক্রম করে চললাম।পথিমধ্যে পায়খানার হাজত হল।জঙ্গল নিকটেই ছিল,একটি ঝাড়ের আড়ালে হাজত সারার জন্য বসে গেলাম।এমতাবস্থায় একটি বৃহৎকার সবল বাঘ আমার উপর হামলা করল।হঠাৎ দেখতে পেলাম একজন সম্মানিত শেখ পবিত্রতার পাত্র (লোটা-বদনা) হাতে নিয়ে আবির্ভূত হলেন এবং (লোটা-বদনা)টি বাঘের নাকে নিক্ষেপ করলেন,এতে বাঘটি পালিয়ে গেল।ঐ বুজুর্গ অদৃশ্য হয়ে গেল এদিকে আমিও প্রাণ নিয়ে সত্বর প্রস্থান করলাম।ঐ বুজুর্গ কে ছিলেন? উদ্দেশ্য পথে ওখান থেকে শীঘ্রই যাত্রা দিলাম।আজ গাউসুল আযমের সাক্ষাত লাভের মাধ্যমে উভয় জগতের কল্যাণ ও সৌভাগ্য অর্জনে ধন্য হলাম।যখনই জগতপতির সৌন্দর্য রবির আলোক রশ্মির প্রতিবিম্ব হুযুর পুর নুরের সাক্ষাতে অন্তর চক্ষু আলোকিত হল তখন প্রতীয়মান হল যে,অই বুজুর্গ আমাদের কুতুবুল্লাহিল আফখম গাউসুল্লাহিল আ’যম মাইজভাণ্ডারী কেবলা কাবা কঃ ই ছিলেন।সুবাহানাল্লাহ...
বেলায়তের দীপ শিখার পতঙ্গ ও গাউসিয়তের সৌন্দর্য প্রাণ উৎসর্গকারীদের জন্য শুভ সংবাদ যে,গাউসিয়তের দয়া-অনুগ্রহের পরিবেষ্টন যখন তাঁর প্রেম-ভালবাসার বেদনা উদ্যানে ভ্রাম্যমানদেরকে সদা-সর্বদা প্রকাশ্য শত্রু ও ভয়ংকর হিংস্র প্রাণীর থাবা থেকে রক্ষা করে ইহকালে রাজকীয় ছত্র-ছায়ার সুরক্ষা ও তাঁর নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা দুর্গে আশ্রয় দেন,তবে সুদৃঢ় প্রত্যাশা ও নিশ্চিত ভরসা যে,কিয়ামতের ভীতিপ্রদ অবস্থাও তাঁর বিচ্ছেদ-বেদনায় হয়রায়-পেরেশান ও দরদে মহব্বতের তৃষ্ণার্ত আকাংখীদেরকে মঞ্জিল পথের সকল শত্রু ও বাঁধা-বিপত্তি থেকে রক্ষা করে নূরানী কদম তলে স্থান প্রদান পূর্বক আপন দীদার দানে শান্ত ও স্থির ফরমাবেন।
আয়নায়ে বারি (মূল উর্দু শের) তে উল্লেখ,
“আজব উচ্চতা আজম শক্তি মান সম্মান তোমার,
আজব মর্যাদা আজব মনজিল আজব দরবার তোমার,
আজব শান আজব শওকত আজব রুতবাহ শাহ তোমার,
বাস্তবে রবি-শশী অণু যে তব মহান আস্তানার।
সুন্দর্য রাজ্যের তুমি উচ্চ মর্যাদাবান সে সুলতান,
অন্তরে আর চুক্ষে হল যে,নুরানি আসন তোমার।
দয়া-দানের উৎস তুমি রহমতের খনি তুমি,
দান-দাক্ষিণ্য তব সাক্ষী দানশীলতা পরে তোমার।
ফুল্লতার আকাশে তারকা রূপ চমকিবে সদা,
দিল-ঈমানে যে হয়েছে ধুলি-বালি তব রাস্তার।
মুসিবতে আর ফিতনার কালে নিবে যে নাম তোমার,
ফিৎনা সকল দূর হবে দয়ার দৃষ্টিতে তোমার।
তব আলীশান দরবারের গোলাম হলে অন্তরে,
প্রজা হবে রাজা দয়া-কৃপার নজরে তোমার।
যদিও হয় বিন্দু পলকে সিন্ধু হবে সে,
করুণাপ্রার্থী হবে যদি,রহমতের দ্বারে তোমার।
পলকহীন পিঁপড়া তব দ্বারে যদিচ আসে শাহা,
নিশ্বাসে ‘ হুমা’ হবে হলে দয়া-দৃষ্টি তোমার।
দ্বারের গোলাম হয় যদিও অতি গুনাহগার,
কৃষ্ণকর্মফর্দ শুভ্র হবে কৃপার নজরে তোমার।
দুই কূলের মুসিবতে নেইকো ডর তাঁর শাহা,
সত্য অন্তরে আশ্রয় নিল যে দামান তলে তোমার।
হয় যদি খড় তব আস্তানা শরীফের বারান্দার,
লৌহ পাহাড় হবে নিশ্চয় দয়ানুগ্রহে যে তোমার।
হে গাউসুল্লাহিল আ’যম হীন মকবুলও তব,
দরবারের গোলাম হই ভরসা দয়া পরে তোমার” ।

গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারি এর কেরামত পর্বঃ ৪ (আয়নায়ে বারি)

হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী এর প্রতি অশিস্টতায় অলির বেলায়ত চ্যুতি>>>>>
জনাবে হুজুর পুরনুরে গাউসিয়ার নযরানার সাথে বেয়াদবি করে এক প্রসিদ্ধ অলির বেলায়ত হারাবার হৃদয় বিষন্ন করা ঘটনা, সত্যের স্মারক, সত্যবাক বর্ণনাকারিগণ এ রুপ বর্ণনা করেন। ফটিকছড়ি থানাস্থ শাহ নগর নিবাসী বাহরুল্লাহ নামক একজন,উচ্চ মর্যাদাবান,ছাহে
বে মকামাত,আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত প্রিয় অলি ছিলেন।তিনি সময়সাময়িক কোন অলিয়াল্লাহকে আপন সমকক্ষ মনে করতেন না।একদা গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারি কঃ এর অনুরক্ত কাঞ্চনপুর নিবাসী এক ব্যাক্তি বাজারবাছা এক হাড়ি মহিষের দই কিনে হাদিয়া দেবার মানসে দরবারে গাউসিয়ায় নিয়ে যাচ্ছিলেন।বাহরুল্লাহ সাহেব তখন রাস্তার মাথা বসা ছিলেন।আল্লাহ মা’লুম তাঁর অন্তরে কি খিয়াল এসেছে? সে হাদিয়া সমেত গমনকারীকে দেখে জিজ্ঞাসা করল “তুমি এই দই হাদিয়া আমার সম্মুখ দিয়ে কোন মহান ও মর্যাদাবান ব্যাক্তির জন্য নিয়ে যাচ্ছ?” সে জানাল যে হুজুর! এই হাদিয়া-নযরানা হযরত কুতুবুল্লাহিল আফখম গাউসুল্লাহিল আ’যম মাইজভাণ্ডারী ‘রদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র জনয।আত্মহমিকতায় আঘাতকারি এ সংবাদ শুনামাত্র উক্ত শাহ সাহেব সত্ত্বর আপন বসার স্থান থেকে উঠে জোর পূর্বক ঐ দইয়ের হাঁড়ি ছিনিয়ে নিল।এ যুগে আমার চেয়ে হাদিয়া খাওয়ার অধিক যোগ্য সে আবার কে? বলে গাউসুল আ’যমের হাদিয়ায় আঙ্গুল ডুবিয়ে উপর থেকে কিছু খেল এবং অবশিষ্টাং থুথু দিয়ে হাদিয়া আনয়নকারিকে দিয়ে দিল।সে অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত অন্তরে সজল নয়নে ঐ বেয়াদবির নালিশ দেয়ার জন্য গাউসুল আ’যমের আলীশান দরবারে নিরবে দইয়ের হাঁড়ি নিয়ে উপস্থিত হল।এখনও পর্যন্ত ঐ ব্যাক্তি সুমহান আস্তানা শরিফের বারান্দা পর্যন্ত পৌঁছেনি,হযরত গাউসুল্লাহিল আ’যম এর জালালিয়তের সমুদ্র জোয়ারে উচ্ছাসিত হয়ে এরশাদ করলেন, “সাবধান! দইয়ের হাঁড়ি আমার দরবার পর্যন্ত পৌঁছাবে না।হারামজাদা! বাহরুল্লাহ-কে বলবে দইয়ের হাঁড়ি গুহ্যদ্বারে দিতে”। হযরতের জালালিয়ত দেখে সম্মুখে গিয়ে ঘটনার বিবরণ দেওয়ার সাহস হল না আগন্তুকের,সে স্বভয়ে সেখান থেকে ফিরে হযরত গাউসে পাক এর অবশ্য তামিল যোগ্য নির্দেশ মতে ঐ দইয়ের হাঁড়ি উক্ত বাহরুল্লাহর সামনে রেখে আপন নিবাসে প্রত্যাগমন করল।সে দিন থেকেই আল্লাহর মহান নেয়ামত বেলায়ত বাহরুল্লাহ হতে ছিনিত হল এবং আল্লাহর দরবারে যে মান-মর্যাদা ছিল তা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেল।প্রভুর দরবার হতে সম্পূর্ণ বিতাড়িত হল।ভদ্র-অভদ্র,অভিজত-সাধারণ সর্বমহলে ধিক্কৃত হতে লাগল।যততত্র অপমান ও লাঞ্চনার স্বীকার হচ্ছিল।কিছুকাল এমন তিরস্কার অবস্থায় ভবলীলা সাঙ্গ করে,পরলোকগত হয়।“আউলিয়াদের সাথে বেয়াদবি থেকে আমরা আল্লাহর আশ্রয় নিচ্ছি” সত্যই যখন ভাগ্য মন্দতা মুখ দেখায় তখন এই পরিণতি হয়।“যখন তাকদীরের ফয়সালা উপস্থিত হয় তখন বিস্তৃত ময়দান সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং যখন ললাটের লিখ বাস্তবায়িত হতে চলে তখন চক্ষু অন্ধ হয়ে যায়”। এর মর্ম মতে যখন কারো দুর্ভাগ্য উপস্থিত হয় তখন সে নিজ অপেক্ষা সম্মানিত ও শীর্ষস্থানিয়দের সাথে বেয়াদবি করে।
আয়নায়ে বারি (মূল উর্দু শের) তে উল্লেখ,“ প্রভু মিলন পথে যে হল বেয়াদব,বঞ্ছিত হল সে হতে প্রভু নেয়ামত।
বেয়াদব যে সেতো নপুংসক বটে,অশিষ্ট পায়না কভু দরদ ও মুহব্বত।
শয়তানের অসম্মান বেয়াদবি হেতু,ঔদ্ধতা ও অপরমান এক বৃত্তে গুথিত ।
পূত জনে পেল উচ্চতা শিষ্টতার কারণে,বলগাহীনতায় জুটে শুধু অধপাত।
দেখ আদব হেতু আকাশ আলো জ্বলমল,আদবদারই হয় ফুল্ল,পুলকিত।
আল্লাহর বন্ধুসনে করে যে বেয়াদবি,তার থেকে প্রভু নেয়ামত হয় ছিনিত।
সে কারণে বলেছেন আল্লামা রুমী,মসনবি খুলে দেখ হতে নিশ্চিত।
আদবের শক্তি চাই প্রভুর সকাশে,প্রভু কৃপা হতে বেয়াদব যে বঞ্চিত।
আদব হেতু নূরে পূর্ণ এ আকাশ,আদবের কারণে ফেরেস্তাগণ হল পূত।
তরীকত পন্থে করে যে জন বেয়াদবী,গোমরাহি কূপে সে হবে নিক্ষিপ্ত।
আউলিয়া সহিত বেয়াদবী করে যে মরে,তার তরে মন্দ পরিণতি নিশ্চিত।
গাউসে হক মকবুল তব ভৃত্য হয়,আদবের তৌফিক দানে করো আলোকিত”।
আয়নায়ে বারি (মূল উর্দু শের) তে আরও উল্লেখ,“ গাউসে মাইজভাণ্ডারীর আস্তানার ধুলি হবে যে,
কসম আল্লাহর! দুই জগতে সে সুলতান হবে।উচ্চ শান আল্লাহর তাঁকে এমন করলেন দান,
গগণের তপন রুপ দর্শনে পর্দারাড়ে লুকাবে।লাল তারকার মত তাঁকে করে দেন নূরানী।
খাঁটি অন্তরে যে জন দরবারে অণু হবে,গাউসুল্লাহর মকবুল যে আল্লাহর অনুগৃহীত,
সে দ্বারের বিতাড়িত নিশ্চয় প্রভু নিগৃহীত হবে।
সে দরবারে আলীর প্রতি বেআদবি রাখলে মনে,
খোঁদার রোষানলে পড়ে তরবারীস্থ হবে।
করলে বেয়াদবী তাঁর শানে বেলায়ত হারাবে,
মহাপ্রতাপশালীর প্রতাপে শাস্তি যোগ্য হবে।
বেয়াদবী করবে যে,সে যে ঈমান হারাবে যথা তথা লাঞ্ছিত আর অপরমানি সে হব।
চরম হতভাগা নিশ্চয় গোসতাখে দরবার যে,
রোজ হাশরে নরকাগ্নির যোগ্য নিশ্চয় হবে।
ইহাহুদ বা নসরা মূলে সেই ভাগ্যহত,
গাউসে খোঁদার সাথে যে অন্তরে রেষ রাখবে।
হবে না মুনকের তার,বিনে পাপিষ্ট নরাধম,
সে আদি হতভাগা খোঁদা কর্তৃক যে হবে।
ওয়াল্লাহে দু’জগতের সৌভাগ্যে ধন্য হবে সে,
কদাচ যে অন্তরে গাউসুল আ’যমের বাধ্য হবে।
হীন মকবুল অন্তরে,গাউসুল আ’যমে কুরবান,
নহে আশ্চর্য যদিচ দীদার নসিব হবে”। (চলবে)
তদ্রুপ উল্লেখ্য বড় পির গাউসুল আ'যম আব্দুল কাদের জিলানী কঃ এর জিবনিগ্রন্থ (বাহজাতুল আসরার ওয়া মা'দিনুল আনয়ার) পাওয়া যায় ,বড় পিরের শানে বেয়াদবির কারণে,এক অলির বেলায়ত নস্ট হয়ে গেছিল।

গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারি এর কেরামত পর্বঃ ৩ (আয়নায়ে বারি)

হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারির জ্যাোতিতে মোরাকাবায় এক ব্যাক্তি জ্বলে ভস্ম হয়ে ফানা হবার বর্ণনা (চলমান শেষ অংশ) ভোর রাতে যখন হযরত গাউসুল আ’যম ‘রাদ্বিয়াল্লাহু
আনহু’র মেঝ ভাই জনাব মাওলানা আব্দুল হামিদ সাহেব নামায পড়তে মসজিদে গেলেন,তখন উক্ত শেখ সাহেবের এই ভীতিপ্রদ অবস্থা দেখে ভীত সন্ত্রস্থ অবস্থায় গাউসুল আ’যমের খেদমতে উপস্থিত হয়ে অবস্থা জানালেন, গাউসুল আ’যম হযরত কেবলা কঃ এরশাদ ফরমালেন, “ আপনি সেথায় ফিরে যান যেখানে উক্ত শেখ সাহেবের শরিরে আল্লাহর প্রেমাগ্নি লেগে প্রথমে জ্বলে ভস্ম এবং পরে আল্লাহর অনুগ্রহে পানিতে পরিণত হয়েছে।ঐ স্থানকে আতর গোলাব দ্বারা সুবাসিত ও সুগন্ধিত করুন এবং উক্ত জমা পানি একটি সংরক্ষিত স্থানে দাফন করে দিন।খবরদার! এ ব্যাপারে কাউকে অবগত করাবেন না”।অতএব মৌলভি সাহেব গাউসুল আ’যমের নির্দেশ মতে সকল কার্য সমাধা করে গাউসুল আ’যম ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’কে খবর পৌঁছালে গাউসুল আ’যম ‘রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু’ বললেন, “যে অলি “ফানায়ে ফায” তথা বিলীনতার প্রান্ত সীমায় উপনীত হন,তিনি পুনঃরায় নশ্বর জগতে ফিরে আসা সম্ভব নয়।দুইজন অলি ব্যতিত কেউ এ মকাম থেকে ইহজগতে ফিরে আসে নি।একজন হলেন হযরত সুলতানুল আউলিয়া সনদুল আছফিয়া মাহবুবে সুবহানি শেখ মুহিউদ্দিন আবু মুহাম্মদ আব্দুল কাদের জিলানী ‘রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু’র ভাগিনা সৈয়দ আহমদ কবির ইবনে রেফায়ী ‘রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা’।অন্য একজন পূর্ব যুগের অলির বেলায় ও এমনটি ঘটেছে।ভাগ্যমান শেখ আহমদ ‘রহমতুল্লাহি আলাইহি’র পরম সৌভাগ্য যে,প্রাণেশ্বরর মিলনের মুহূর্তে প্রাণপাখি প্রাণের প্রাণের,উপর উৎসর্গিত হল,সুবাহানাল্লাহ! কোন দিলঘায়েলের দিলের এমন সামর্থ? সে প্রেমাকাশের তপনের তাপ সইতে পারে?কতই প্রিয় বাঞ্ছিত? কতই হৃদয় পাগল করা কাংখিত? যে সর্বজনাবের প্রেম-মুহব্বতের তাপদাহে সর্বদা সূর্যের বক্ষ কবাব এবং আশেককুলের প্রাণ পূর্ণাসক্ত,চমকিত ও বিদীর্ণ।
আয়নায়ে বারি (মূল উর্দু শের) তে উল্লেখ,“ তোমার প্রেমে যে অনল জ্বলিল,দেখ এবে মম দিল ও জিগর কাবাব হল অন্তরের ব্যাকুলতা বলিব কি প্রিয়া? নমুনা কিছু চাইলে দেখ তা বিদীর্ণ।“
আয়নায়ে বারি (মূল উর্দু শের) তে আরো উল্লেখ,“ যে সদা তব কদম দেখে,দিল ও নয়না সদা জ্যোতিময় দেখে।
গাউসে আ’যমের চরণ চুমে যে,সদা সে আপন সৌভাগ্য দেখে।
গাউসের চরণ কিবরতিতে আহমর,যার কপালে লেগেছে কিমিয়া দেখে।
পাদুকা মোবারকের ধুলি যে সুরমা,নয়ন জ্যোতিময় হয় যে লাগিয়ে দেখে।
কেউ কি জানিবে গাউসের মর্তবা,দেখেছে যে তার সে খোঁদা দেখে।
যে ওয়াছেল ও কামেল হল তার প্রেমে,নিজেকে সে খোঁদার সাথে মিলিত দেখে।
খোঁদা প্রেমে হল সে ফানাফিল্লাহ ,যে নিজেকে তাঁর পরে মিটায়ে দেখে।
তাঁর সাথে যে,বাঁধে প্রেমের ডুরী,সে আপন সম্পর্ক খোঁদার সনে যুক্ত দেখে।
নিমিষে সে খোঁদার নিকট পৌঁছে,যাকে তিনি বারেক নয়ন তুলে দেখে।
হল যে তাঁর নিকট সদা গৃহীত,সে গাইরুল্লাহ হতে নিজেকে মুক্ত যে দেখে।
যে প্রতিপলে তাঁর পরে হল ফানা,সে লয়ের মাঝে অলয় নিজেকে দেখে।
মকবুল যখন থেকে হল তব কদমচুমি,নিজেকে সে তব পরে লীন দেখে।

গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারি এর কেরামত পর্বঃ ২ (আয়নায়ে বারি)

আয়নায়ে বারি (মূল  তে উল্লেখ,“দিল হল অগ্নিকুন্ড প্রেমানলে,সোনার
অঙ্গ হল যে ছাই জ্বলিয়ে এবার।তপন তুল্য আনন দেখিলাম যবে,লুকিয়ে গেল তারা যেমন হারা মন আমার।পাগল মন চল এবে যাই মাইজভান্ডারে,দেখা হবে সেথায় তব প্রাণ-প্রিয়ার।মকবুলের এবে নাওহে খবর সে ভগ্নান্তর,এনেছি তা দেখাতে তোমায় খোল রুদ্ধদ্বার”।
পূর্ণ এক সপ্তাহ আবেদনের ললাট ফায়েজপূর্ণ আস্তানার চিত্তমুগ্ধকারক দরজায় ঘর্ষণ করতেছিল,কিন্তু গাউছিয়তের দয়ার সাগর তরঙ্গিত হয়নি।পরিশেষে এক সপ্তাহ পর হযরত গাউসে পাক হযরত কেবলা কঃ ভক্ত-অনুরক্ত সমেত দায়রা শরিফে তাশরিফ আনয়ন করছেন।এমনি মুহূর্তে উক্ত শেখ আহমদ পতঙ্গের ন্যায়
গাউসে পাকের পূর্ণোজ্জল আলোতে মনোপ্রাণ উৎস্বর্গিত হয়ে চরণ যুগল আঁকড়েধরল এবং অতি অনুনয়-বিনয় কাতরতা ও আকুলতায় বাঞ্চিত মিলন পেয়ালার প্রত্যেক্ষদর্শী হল।পরিপূর্ণ উৎসাহ-উদ্দীপনা ও প্রান্তিক কাতরতায় সুমহান দরবারে এভাবে আরজ গুজার হলেন।
আয়নায়ে বারি (মূল উর্দু শের) তে উল্লেখ,“প্রাণ প্রিয়ার নামের আদযাক্ষর ছদকায়,মনোপ্রাণ,দ্বীন ফেদা পরে সে শক্তি সাগর।মুরশিদ আমার আকা ‘মাওলা মুখতার,সদা এই ভিখারি তব দয়া-কৃপাক্ষণার যুলায়খা বরন তোমার প্রেমের বাজার,এসেছি নিকলে শীঘ্র উঠাও আড়াল লজ্জার।দিলী মকছুদের কেবলা-কাবা আস্তানা তোমার,তাওয়াফ করবোনা হরদমে কভু হরমে কাবার,বাগে জান্নাত থেকে উত্তম গলী যে তোমার,বাসনা নেই অন্তরে মোর জান্নাতে যাবার।অহরহ মনে জাগে বাসনা আমার,প্রেমে হই লীন নূরী কদমে তোমার।শাহদাতের কামনা নিয়ে এলাম জগৎ মাঝার,সম্মানের খঞ্জরে সেই ইমাম শাহার।রাঙ্গাপুষ্পের মত চিহ্ন নিয়ে যাবো কবর,যাবৎ না কুরবান হই নূরী কদম উপর।খেদমতে মাথা নত বেদিলের হোক মকবুল।আপনার কদম তলে যে পদচিহ্ন আপনার”।
(একশিয়োমেট্রিক ট্রুথ) স্বতঃসিদ্ধ সত্য যে প্রেমাষ্পদেরা হৃদয়গ্রাহী প্রেম ছলনা কভু ছাড়েন না এবং দিল দারা প্রেমিকদের সকাতর প্রার্থনা কখনো দমিত হয় না।এদিক থেকে সর্বদা জীবন বাজি অপর দিক থেকে সদা বেনিয়াযি,একদিক থেকে প্রতি মুহূর্তে “রাব্বি আরনি” ,হে প্রভু আমাকে দর্শন দাও এবং অপরদিক থেকে সর্বদা “লান তারানি”,রুমি কভু আমাকে দেখবে না” এর তারানা।
আয়নায়ে বারি (মূল উর্দু শের) তে উল্লেখ, “ এই দুইটি কতই উত্তপ্ত প্রেমের বাজার? তোমার হুসন ও ইশকের শরাবে সবই আত্মহার।কত উচ্চ তব সুন্দর্য ও প্রেমের রাজ দরবার,যেদিক দেখিবে তব হুসন ও ইশকের দরবার।ঘুঘু,কোকিল ও তুতী সবের এ আযকার,পুষ্পডালে বুলবুলদের কণ্ঠে এ ঘোষণা বারবার।একদিকে সকাতর প্রার্থনা অন্যদিকে প্রেমছলনা,একদিকেতে শহীদ আর অপরদ দিকে তলোয়ার।একদিকে লনতরানি লনতরানীরই ঠমক,অপরদিকে রব্বে আরনি তালেবে দিদার।
একদিকে ভক্ত,প্রণত,তসবীহ,আর ছেঁড়া পোশাক,অপরদিকে মদে মত্ত প্রেম শরাবী বেকরার।
একদিকে মসজিদ,মেহরাব,মিম্বর শেখ যে,অপরদিকে প্রেমালয়ে প্রেমজ্ঞানী পৈতাদার।
একদিকে বৈদ্য,ঔষধ,চিকিৎসা,অপরদিকে প্রেমতাড়না দুরারোগ্য বিমার।
একদিকে বেদিল মকবুলের অসহায়ত্ব,অপরদিকে শাহী ঠমকে গাউসে মাইজভাণ্ডারী”।
আলকিসসা,নায ও নিয়াযের পর হযরত গাউসুল আ’যম ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’ ভক্ত কর্তৃক
হাদিয়া স্বরূপ দরবারে আনীত গুড় থেকে কিছু পরিমাণ নিয়ে অতি চিত্তমুগ্ধ ও কামনীয় ভঙ্গিতে এবং মাহবুবানা কারিশমায় উক্ত শেখ আহমদ কে দিয়ে বললেন যে, “ আজ রাত আপনি আমাদের মসজিদে আরাম ফরমাবেন”। শেখ সাহেব অলংঘনীয় আদেশ মোতাবেক মসজিদে অবস্থান নিলেন।রাতে যহন শেখ সাহেব গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারীর কলবের প্রতি মনোযোগ দিয়ে মোরাকাবায় বসলেন ,আল্লাহর কুদরতে তাঁর সমস্ত শরিরে আগুন লেগে গেল এবং তাঁর শরির জ্বলে ভস্ম স্তুপে পরিণত হল
আয়নায়ে বারি (মূল উর্দু শের) তে উল্লেখ পংক্তিঃ “গাউসের প্রেমে বদৌলতে যে আগুন লেগেছে,সব ভস্ম হয়ে উড়ে গেলে ফানার আকাশে”
অরপরঃউক্ত ভস্ম পানিতে পরিণত হয়ে তাঁর বসার স্থানে বরফের মত স্তূপ হয়ে জমে রইল।
আয়নায়ে বারি (মূল উর্দু শের) তে উল্লেখ, “ কাল-নাগিনি ধ্বংসিতে কলিজায়,হয়ে গেল জ্বল কসম বেদিলির”

গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারি এর কেরামত পর্বঃ ১ (আয়ানায়ে বারী হতে)

হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারির জ্যাোতিতে মোরাকাবায় এক ব্যাক্তি জ্বলে ভস্ম হয়ে ফানা হবার বর্ণনা
কারামাতের ঠিকানা যোগাযোগস্থল,মাও
লানা শাহ আমিনুল হক ওয়াদদিন,কাদ্দাসা সিররাহু রাব্বুল আলামিন যিনি হযরত গাউসে পাক আহমদ উল্লাহ শাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র আপন ভ্রাতুষ্পুত্রে ও বিশুদ্ধভাষি এবং অনুপম বাকপটু ছিলেন।তিনি তেজস্বী বর্ণনাকে এ হৃদয়গ্রাহ্য ময়দানে মনোহর ভাষায় এ ভাবেই উপস্থাপন করেন যে আমাদের হযরত,গাউছিয়তের ধারক ও কুতুবিয়তের বাহক প্রায় চল্লিশ বছর যাবৎ সম্পূর্ণরূপে একত্ববাদের মদে আত্মহারা ছিলেন।সদা আল্লাহর সুন্দর্য পর্যবেক্ষণ সাগরে বাস্তব প্রত্যক্ষকারি রূপে এমন ভাবে নিমজ্জিত থাকতেন যে,গাইরুল্লাহর দিকে চক্ষু তুলে দেখতেন না। সর্বদা " مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغَى" অর্থাৎ দৃষ্টি টলেও নি আর অগ্রসর ও হয় নি" (সুরা ওয়ান নাজমে ১৭নং আয়াত)।এর নীতিতে বিদ্যমান ছিলেন এবং دَنَا فَتَدَلَّىفَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى অর্থাৎ নিকটবর্তী হল অতঃপর দুই তীর ধনুকের পরিমাণ অথবা আরো নিকটবর্তী হল (সুরা ওয়াননাজমে ৮-৯ নং) ,এর মর্মমতে নৈকট্যের উচ্চাসনে সর্বদা সমাসীন থেকে আল্লাহর নূরী তজল্লিয়াতের প্রত্যেক্ষদর্শী থাকতেন।
আয়নায়ে বারি (মূল উর্দু শের) তে উল্লেখ, " সে নুরে জমালি অতে কভু বেখবর না হবো,প্রিয়ার গলী ছেড়ে দূরে কোথাও নাহি যাবো। স্থির দৃষ্টির সুরমা হতে সুরমাকরষণকারি থাকবো,তজল্লীর চমক থেকে কভু দৃষ্টি নাহি ফিরাবো।"গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারি 'রাদ্বিয়ানহুল্লাহুল বারি'র উচ্চ কামালাত ও মহান মর্যাদার প্রসিদ্ধি শুনে দূর-দূরান্ত থেকে খোদাপথ তালাশকারি ,হেদায়েতের শরাব খানার তৃষ্ণার্ত,অন্বেষণাগ্নিতে ভস্মাহৃদয় ও প্রেম-প্রেরণার মদে পূর্ণমত্তগণ মহান আল্লাহর এই প্রজ্বলিত দীপ্তির উপর পতঙ্গপালের ন্যায় জীবন দিতে শুরু করল।রহমতে পূর্ণ এ গুলবাগিচা থেকে বাতেনি ভাবে আশা-আকাংখার পুষ্পরাজি বিহীন রিক্ত ফেরাতো অসম্ভব,কিন্তু দৃশ্যত মনোযোগ না পাওয়ার কারণে জাহেরী তালেবগণের অন্তরে অত্যন্ত বিষন্নতা ছিল।
আয়নায়ে বারি (মূল উর্দু শের) তে উল্লেখ," মোদের প্রেমিক প্রবরের মুখোজ্যাোতি,যবে প্রতিঘরে দীপ্ত হল,জগতের প্রেমিক সবের প্রাণ,সে শিখায় যে পতঙ্গ হল।দয়ার স্বভাব এ উদ্যানে,পাতল যে ভিক্ষার দু'হাত,রিক্ত ফিরবেনা কভু সে,ভিখারি হইয়ো নাকো আশাহত"।
একদা পাঞ্চাব বংশোভূত,উদ্দেশিত তালাশকারি ,জানবাজ আশেক সকাতর নিবেদিত,বিরহাগ্নিতে,দ্রবীভুত,বিদগ্ধ রহস্যজ্ঞানি বন্ধুর প্রেমে পাগলপারা,মিলন শরাবের তৃষ্ণার্ত শেখ আহমদ নামক এক ব্যাক্তি বন-জঙ্গল ঘুরে ঘুরে জল-স্থল অতিক্রম করে পাগল ও পতঙ্গের ন্যায় অতু্ৎসাহে গাউছিয়তের ভাস্কর হযরতে আকদছের দরবারে এসে উপস্থিত হন।
আয়নায়ে বারি (মূল উর্দু শের) তে উল্লেখ,” পড়ল কেমনে হৃদয় দর্পণে কঠিন সে পাথর,হল যে সে ক্ষণে চূর্ণ-বিচূর্ণ আমার অন্তর বন-অরণ্যে শহরে প্রান্তরে খুজেছি সবখানে, অন্বেষীয়ে পাইনি কোথাও হারা মন যে আমার।খঞ্জরে আবরুতে করিয়ে যবেহ মারিল প্রাণে,যায় না আর সহা হৃদয়ের আনচান আমার।লাগল যবে অন্তরে মোর প্রেমের সে আগুন,অণুর বরণ উড়িল জ্বলে ভস্ম মন আমার”।

লেওয়ায়ে আহমদি ও লেওয়ায়ে মোহাম্মদি

হাসরে বড়পীর ছাহেব কঃ শানে মোস্তফা (দঃ) এর পরিচয়কে ঘোষণার দায়িত্ব সম্পাদন করবেন। হযরত বড়পীর ছাহেব কঃ এর জীবনী গ্রন্থ “বাহজাতুল আসরার” বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন,“কুতুবিয়তের ঝাণ্ডা আমার সামনে উড্ডীয়ন হয়েছে” এবং গাউছিয়তের তাজ আমার মাথার উপর রাখা হয়েছে ।হযরত বড়পীর ছাহেব আরও বলেছেন, “আমি পূর্ণচন্দ্র নবীর পদাঙ্ক অনুসারী”।অন্য কোন ওলিয়ুল্লাহের সাথে তুলনা করে শাহানশাহে মাইজভাণ্ডারীর শান মান মর্যাদা বুঝতে চাইলে অনধি তাজধারী  দুই গাউসুল আ'যম অপর সত্তা শাহানশাহে বাগদাদের সাথেই একয়াত্র তুলনা করা চলে,তাইত শাহানশাহে বাগদাদের ইরশাদ সুত্রে তাকে কারোর সাথে এবং কাউকে তাঁর সাথে তুলনা করতে নিষেধ করায় (বাহজাতুল আসরার ২৫-২৬ ও ৫২ পেইজ) যেমন নিজ সমকক্ষ বন্ধুটি (বাহজাতুল আসরার ৭৭-৭৮ পেইজ) ছাড়া কেউ তাঁর তুলনা হতে পারে না, আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় মেরাজের রজনীতে রফরফের খেদমতের অনুকূলে গাউছুল আজমিয়তের (মোহাম্মদী ও আহমদী) সত্ত্বার প্রতি আনুকূল্যে তাঁর প্রিয় হাবিবে মোস্তফার শানে আজমতকে হাশরের ময়দানে সমগ্র সৃষ্টির সম্মুখে উপস্থাপনের গৌরবান্বিত দায়িত্ব পালনের সৌভাগ্যই গাউছুল আজমিয়তের শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার। তাওহীদের বাণী "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" এবং ঈমানের বাণী "মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ" দঃ এর সমন্বয়ে এই পরিপূর্ণ ঘোষণার দায়িত্ব প্রাপ্ত বেলায়তের প্রতিনিধিই গাউছুল আ'যম পরিচয়ের যথার্থ অধিকারী।
আলহাজ মাওলানা সৈয়দ আজিজুল হক আল কাদেরি (শেরে বাংলা) রহঃ সাহেব চট্ট্রগ্রাম জেলার অন্তর্গত হাটহাজারি থানার অধিবাসি হন।তিনি তৎকালীন মাশরেকি পাকিস্থানের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আমির।হযরতের শানে (মূলঃফার্সি ভাষায়) লেখা তাঁর "নজরে আকিদত"শীর্ষক কসিদায় বলেন,ঃহযরত শাহ আহমদ উল্লাহ কাদেরি(প্রসঙ্গতঃউল্লেখ্য যে,কাদেরি শব্দ্রের যথার্থ মর্ম উপলদ্ধিতে ব্যর্থ কতিপয় লোক মাইজভান্ডারি তরিকার স্বাতন্ত্র্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে,তাদের উদ্দেশ্যে বলতে হয়,তরিকতের সিলসিলাগত পূর্বধারাবাহিকতায় হযরত গাউসুল আ'যম জিলানী কঃ,জুনাঈদি-সকতী হওয়া সত্ত্বেও যেভাবে একটি স্বতন্ত্র তরিকা প্রতিষ্ঠা করেন,অনুরুপ হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারি কঃ ও পূর্বধারাবাহিকতায় সোহরাওয়ারদী-কাদেরি হওয়া সত্ত্বেও স্বতন্ত্র একট তরিকা প্রতিষ্ঠা করেছেন)।যিনি ভূখন্ডের পূর্বাঞ্চলের বিকশিত কুতুবুল আকতাব (কুতুব এর বহুবচন কুতুবুল আকতাব,কুতুবুল আকতাব এর ব্যবহারিক অর্থ যিনি কুতুব তৈরি করেন)।তিনি মাইজভান্ডার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত গাউসুল আযম নামধারি বাদশাহ।তিনি নবির আহমদি মসরব (বেলায়তে মোতালকা যুগের) উম্মতগণের চেরাগে হেদায়ত বা আলোকবর্তিকা।হোমা পাখির মত তাঁর অনুগ্রহ ছায়া দুর্ভাগাকে ভাগ্যবানে পরিণত করে।জগতবাসীর জন্য তিনি লাল গন্ধক বা স্পর্শমণি সদৃশ।রাসুলুল্লাহ দঃ এর নিকট বেলায়তে ওজমা বা শ্রেষ্ঠ বেলায়তের দুইটি সম্মানি প্রতীক বা তাজ ছিল" (যা বেলায়তে মোকাইয়েদার
মোহাম্মদি ও বেলায়তে মোতালাকায়ে আহমদি বলে বুঝা যায়)এই সম্মান প্রতীক বা তাজ দুইটির মধ্যে একটি হযরত শাহ আহমদ উল্লাহ কঃ এর মস্তক মুবারকে নিশ্চিত ভাবে প্রতিষ্ঠিত।যেই কারণে তিনি পূর্বাঞ্চলের (স্থানের দিকে নিসবত) গাউসুল আযম বলে খ্যাঁত,সেই কারণে তাঁর রাওজা মুবারক মানব দানবের জন্য খোঁদায়ি বরকত হাসেলের উৎসে পরিণত হয়েছে,দ্বিতীয় তাজ বা সম্মান প্রতীক জিলান নগরের (স্থানের দিকে নিসবত) বাদশা হযরত শায়খ সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানীর কঃ মস্তক মুবারকে প্রতিষ্ঠিত ,যেই কারণে সমস্ত আউলিয়াগণের গর্দানে তাঁর পা মুবারক প্রতিষ্ঠিত।অর্থাৎ, সমস্ত আউলিয়া তাঁর আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য।মে'রাজ রাত্রে খোঁদার পেয়ারা নবি দঃ "রফরফ" বা তাঁর বেলায়তে ওজমার প্রভাবে ঊর্ধ্বে "আরশ" মুবারকে পৌঁছাতে সমর্থ হয়েছিল।সেই সময় নবী করিম দঃ মোজেজা আলৌকিক বাণী তে বলেছিলেন,তুমিই "মুহিউদ্দিন" দ্বীনে মোহাম্মাদিকে জীবনদাতা।এই উপাধি তোমার বেলায়তী খেদমত বা আনুগত্যের পুরষ্কার।এই কবিতা লেখকের নাম যদি কেহ জানতে চান ,শেরে বাংলা বলে জানবেন।হে খোঁদা! তুমি তাঁকে শত্রুর অনিষ্ট হতে রক্ষা করিও (বেলায়তে মোতালাকা ৫১ ও ৫২ পেইজ ৫ম পরিচ্ছেদ)
গাউসুল আ'যম বড় পিরের অনুরুপ গাউসুল আ'যম হযরত কেবলা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ শাহ মাইজভাণ্ডারী কঃ বলেছেন,
১)যে কেহ আমার সাহায্য প্রার্থনা করিবে আমি তাহাকে উম্মুক্ত সাহায্য করব, আমার গাউছিয়ত সরকারের এই রীতি হাসর তক জারি থাকবে। হাসরের দিন লেওয়ায়ে আহমদীর ঝান্ডা হাতে নিয়ে আমি সর্ব প্রথম বলিব ""লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ"' (বেলায়তে মোতালাকা ৫৫-৫৬ পেইজ ৫ম পরিচ্ছেদ,জিবনি ও কেরামত ১১০ পেইজ)
হাসরের দিন রাসুল করিম দঃ এর যেই নিশান উথিত হবে,তার নাম" লেওয়ায়ে আহমদী" বা প্রসংসিত ঝান্ডা।কারণ,রাসুল করিম দঃ নবি হাইছিয়তে বা অবস্থায় মে'রাজ শরিফে "সিদরাতুল মুনতাহা" পর্যন্ত হযরত জিব্রাইলের আঃ এর সঙ্গ লাভ করেছিলেন।জিব্রাইল আঃ সেখানে বলেছিলেনঃ"আমি আমার পরশ্ম পরিমাণও অগ্রসর হতে চেষ্টা করলে খোঁদার তাজাল্লি আমার ডান পোড়াইয়ে দিবে"।পরিশিষ্টঃ যেহেতু বেলায়ত সম্পর্ক,খোঁদার সঙ্গে নিরিবিলি নিকটতুম এবং অনন্ত।অতএব,এই বেলায়তি ঝান্ডা লেওয়ায়ে আহমদি বা প্রসংসিত ঝান্ডাই হাশরের দিন তাঁর শেষ প্রতীক বা নিশান হবে।(বেলায়তে মোতালাকা ১১০ পেইজ ১১শ পরিচ্ছেদ)
২)রাসুলুল্লাহের হস্ত মুবারকে দু'টি তাজ ছিল,একটি তাজ আমার মাথায় পড়িয়ে দেন,অপরটি আমার ভাই পিরানে পির শায়খ আব্দুল কাদের জিলানি সাহেবের মাথায় পড়ানো হয়। (জিবনি ও কেরামত ২০০ পেইজ এবং বেলায়তে মোতালাকা ৯৫ পেইজ ৯ম পরিচ্ছেদ)
৩)আমি একদিন আমার ভাই পিরানে পির সাহেবের সহিত কাবার শরিফে ঢুকিয়া দেখিতে পাইলাম,রাসুল করিম সাল্লাল্লাহে আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছদর (ছিনা) মুবারকে এক অসিম দরিয়া,আমরা উভয়ে উহাতে ডূব দিলাম (জিবনি ও কেরামত ২২০ পেইজ বেলায়তে মোতালাকা ৯৬ পেইজ ৯ম পরিচ্ছেদ)
গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারীর বাণী থেকে তা পরিস্কার বুঝা যায়।তিনি বলেছেন," আমি একদিন আমার ভাই পিরানে পির সাহেবের সাথে কা'বা শরিফে ডুকে দেখতে পেলাম রাসুল করিম সাল্লাল্লাহে আলাইহে ওয়া সাল্লামের পবিত্র সিনা মুবারক এক অসীম দরিয়া।আমার উভয়ে উহাতে ডুব দিলাম।পরে দেখি দরজায় রক্ষিত আমার দারুচিনি গাছের লাঠিটি হারিচান্দ চুরি করে তাঁর নিজের চাকের কাঠি বানিয়েছে"(সুত্রঃ জীবনি ও কেরাম গ্রন্থ ২০০ পৃষ্ঠা প্রকাশ মে ১৯৮৭ইং,বেলায়তে মোতালাকা ৮২ পৃষ্ঠা দৃষ্টব্য)
তদ্রুপ শায়খ শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভি রহঃ তাঁর “গাউসুল ওয়ারা” নামক জীবনি গ্রন্থে বলেন,অন্তিম সময়ে গাউসে পাক রাদিঃ স্বলিখিত “মাকতুবাত” এ লিখেন,” খুদ্বনা বাহরান লাময়াক্বিফ আলা সাহিলিহিন আম্বিয়া” অর্থাৎ,’ আমি এমন এক সাগরে ডুব দিয়েছি যার উপকূলে আম্বিয়াগণের দাড়াবার সৌভাগ্য নসিব হয়নি” ।হযরত শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভি রহঃ উক্ত গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে বলেন যে, “মুজতাহিদগণের দৃষ্টিতে স্বয়ং হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ই মহান সমুদ্র।অর্থাৎ,এর ব্যাখ্যা হল-আমার (গাউসে পাক)জাহেরি-বাতেনি,শরিয়ত-ত্বরিকতের অনুসরণের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণতা এবং হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি অনুসরণের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণতা এবং হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অস্তিত্বে জায়গায় পরিপূর্ণ বিলীন (কামেল ফানা হুয়া) হওয়া সম্ভব হয়েছে ।(সুত্র শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভি রহঃ’গাউসুল ওয়ারা’ পৃষ্ঠা ২৪(উর্দু) ,প্রকাশনায়-মাকতুবাতে জামে নূর,৪২২ মিঠা মহল জামে মসজিদ দিল্লী,ভারত)
কুরানে পাকে উল্লেখ,আল্লাহ বলেন, “হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহে আলাইহি ওয়া সাল্লাম,আমি কি তোমার জন্য তোমার বক্ষ উম্মুক্ত করে দেইনি?”।(সুত্রঃ সুরা আলম নাশরাহ(ইনশিরাহ),আয়াতঃ১)
সুতরাং উক্ত বাণি সমুহের আলোকে স্পস্ট গাউসে মাইজভাণ্ডারী এবং গাউসে জিলানি উভয়েই,রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহে আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছদর মুবারকে ডুব দিয়ে ইলমে দ্বীন,মারেফত,কামালত,বেলায়ত,আজমিয়ত, সহ বেলায়তের উচ্চ আসন তথা বেলায়্তে ওজমা হাসিল করেছেন,সুবাহানাল্লাহ

দুই গাউসুল আ'যম (পর্বঃ ৩)

হযরত শায়খ আবদুল হক দেহলভী (রঃ) তার শরহে ফতুহুল গাইবে লিখেছেনঃ হযরত গাউসুল আ'যম বড় পীর (কঃ) উল্লেখিত উক্তি হযরত গাউসুল আ'যম বড় পীর সাহবের জামানার ওলী আল্লাহদের সম্পর্কে ছিল। তিনি আরও বলেন, হযরত মুজাদ্দেদে আলফেসানী শায়খ আহম্মদ সরহন্দী (রহঃ) বলেন- হযরত গাউসুল আ'যম বড় পীর (কঃ) উল্লেখিত উক্তি কেবল তার জামানার আউলিয়াগণ সম্পর্কেই ছিল। পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী আউলিয়াগণ এর অন্তর্ভুক্ত নহেন। মহীউদ্দিন ইয়াহিয়া হাম্বলী তৎপ্রণীত কালায়েদে জওহারে লিখেন যে, ‘কদম’ শব্দের এখানে আভিধানিক অর্থের পরিবর্তে পারিভাষিক অর্থ গ্রহন করতে হবে। কেননা এর সহিত শিষ্টাচার প্রশ্নও জড়িত রয়েছে। সুতারাং কদম শব্দের ভাবার্থ গ্রহন করলে বাক্যটির গোটা অর্থ দাঁড়ায় যা, তৎকালে প্রচলিত সকল তরিকা হতে হযরত বড়পীর সাহেবের তরিকাই উচ্চ এবং জয়যুক্ত। শেখ ইযযুদ্দী আবদুস সালাম ও এই উক্তি সমকালীন অলিউল্লাহগণের সম্পর্কে প্রযুক্ত বলেছেন এবং উপরোক্ত উক্তি করেছেন।
হযরত শায়খুল আকবর মহিউদ্দিন ইবনুল আরবী (রঃ) বলেনঃ ‘প্রত্যেক যুগে হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর পদাংকানুসারী একজন বিদ্যমান থাকেন। যিনি যুগের আবদুল্লাহ হন। তাকে কুতুবুল আকতাব বা গাউস বা গাউসে জমান বলা হয়। (ফছুছুল হেকম উর্দ্দু ২৩২ পৃষ্টা)।কুতুবুল
আকতাব দের মধ্যে বিশেষ উচ্চতর মর্যাদায় আসীন হিসেবে মহান দুই যুগে দুজন গাউসুল আ'যম কে দেখা যায় দাবিদার হিসেবে।সুতরাং উপরোক্ত কালাম এবং নির্ভরযোগ্য সূত্র অনুসারে আমরা বলতে পারি পৃথিবীতে একাধিক গাউসুল আ'যম আবির্ভাব হয়েছে এবং শুধুমাত্র একজন গাউসুল আ'যম আবির্ভাব হয়েছে এটা আমরা বলতে পারবনা। রাসুল (দঃ) বলেনঃ ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা আমার উম্মতের জন্য প্রতি শতাব্দীর প্রারম্ভে এমন ব্যক্তি প্রেরন করেন, যিনি দ্বীনের সংস্কার সাধন করেন’’ এই হাদিস শরিফটি হাকিম এবং বায়হাকী মুস্তাদরাকে উল্লেখ আছে। এই হাদিসটি জামেউস সগীর নামক কিতাবে, আল্লামা হক্কী (রঃ), মিরকাতুস সাউদ শরহে সুন্নাতে আবু দাউদ-আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতী (রাঃ), আজমাউল ফতোয়া কিতাবে –মওলানা আবদুল হাই লকনবী (রাঃ) উল্লেখ করেন।
গাউসুল আ'যম বা মুজাদ্দেদ বিষয়ে এর চেয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্র নাই সুতরাং যারা বলেন পৃথিবীতে শুধুমাত্র গাউসুল আ'যম আবির্ভাব হয়েছেন তারা ভুল মত পোষণ করেন। এই বিষয়ে ঈসাপুরি বলেন, যারা হযরত গাউসুল আ'যম শেখ আবদুল কাদের জিলানী (ক) পর আর কেহ গাউসুল আ'যম হবেন না বলে ধারাণা করে অথবা মাশরেকি মাগরিবি ধারণা, তারা ভ্রান্ত। তারা রাসুল্লাহর হাদিসের বিরুদ্ধে ভ্রান্ত মতের পোষকতা করতঃ গাউসিয়ত বড় পীরের (কঃ) জাতে খতম হয়েছে বলে অনুমান করে, যেমন শিয়াগণ বলে যে বেলায়েত হজরত আলী (ক) জাতে খতম হয়েছে [বেলায়তে মুহিত ফি-শানে গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (কঃ)]।
পীরানে পীর দস্তগীর (কঃ)'র রুহানী সন্তান ও বিশ্ব বিখ্যাত ওলী আল্লা শায়খ মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী (রঃ) তার বিখ্যাত গ্রন্থ ফছুছুল হেকম (কিতাবটি রাসুল করিম (দঃ) কর্তৃক স্বপ্নাদিষ্ট হইয়া লিখেছেন) কিতাবে শীস (আঃ) অধ্যায়ের শেষ ভাগে খাতেমুল অলদ বা গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ) শান মান সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণানা করেন যা নিন্মে কিছু আলোচনা করা হলঃ
তিনি খাতেমুল অলদের সম্পর্কে বলেনঃ এই ছেলে অব্যবহিত পূর্বে তার এক বোন জন্ম গ্রহন করবে। তার জন্ম চীন প্রান্তে হবে। তার ভাষা সেই নগরের ভাষা হবে।অতঃপর নর-নারীর মধ্যে বন্ধ্যারোগ সংক্রমিত হবে। জনন প্রজনন ব্যতীতই বিবাহের আধিক্য হবে। মানবজাতীকে তিনি আল্লাহর দিকে আহবান জানাবেন কিন্তু সন্তোষজনক সাড়া পাওয়া যাবে না। তার ও সেই যুগের মুমিনদের তিরোধনের পর মানব স্বভাব চতুষ্পদ জন্তুর স্বভাবে পরিনত হবে।হালাল হারাম পরিচয় করবে না । ধর্ম ও বিবেচনা হতে দুরে সরে প্রকৃতি ও প্রবৃতির নির্দেশে কাম স্পৃহা চরিতার্থ করতে মশগুল থাকবে। (সংগ্রহ বেলায়তে মোতলাকা ৩৩ পৃষ্ঠা)উপরোক্ত ভবিষ্যত বানী সমূহ গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ) সাথে সম্পূর্ন মিলে যায় এবং ইহা গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ) প্রতি প্রযোজ্য হয়। যেমন এখানে উল্লেখ আছেঃ (১) এই ছেলে অব্যবহিত পূর্বে তার এক বোন জন্ম গ্রহন করবে- গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ)জন্ম গ্রহনের পূর্বে এক বোনের জন্ম হয়।(২)তার জন্ম চীন প্রান্তে হবে-ইতিহাস ও ভূগোলের বর্ণানা অনুসারে দেখা যায় চীন প্রান্তে বৌদ্ধ জাতির আবাসস্থালে পার্বত্য চট্রগ্রাম সংলগ্ন ও হিন্দু জাতির তীর্থ স্থান সীতাকুন্ডের পূর্বে অবস্থিত মেরু রেখার সংলগ্ন পূর্বে গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ) জন্ম। যখন ইবনুল আরবী (রঃ) কিতাবটি লিখেছেন তখন গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ) জন্ম স্থান ফটিকছড়ি সহ পার্বত্য চট্রগ্রাম চীনের সহধর্ম বৌদ্ধ রাজার শাসনে ছিল। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পার্বত্য চট্রগ্রামে চীনা বংশীয় লোকেরা বাস করত। তাহা বর্তমানেও চীনের ধর্ম এবং চীনের লোকের দৌহিক গঠনের সাথে মিলে যায়। ফটিকছড়ি এলাকার নামগুলীর সাথে পার্বত্য চট্রগ্রাম এর বৌদ্ধ জাতির (মগ-চাকমা) নামের সাথে সংলিষ্টতা থেকে বুঝা যায় যে এখানের বৌদ্ধ জাতির (মগ চাকমা) চীনা বংশীয় লোকের বাস করত যেমনঃ গাউছুল আযম মাইজভান্ডারী(কঃ) জন্ম স্থান ফটিকছড়ি এলাকা নাম পাহাড়ি ছড়ার নামানুসারে। ফটিকছড়িতে আরো দেখা যায় মগ পুকুর, মগ ভিটা, মালুমের টিলা, দমদমা, বৃন্দাবন হাট,পাইন্দং, ধুরুং, হেয়াকো, ইত্যাদি নাম সমূহ। (৩) অতঃপর নর-নারীর মধ্যে বন্ধ্যারোগ সংক্রমিত হবে-বর্তমান সময়ে বিশেষ করে বাংলাদেশেই বেশি বন্ধ্যারোগে সংক্রমিত হচ্ছে। (৪) মানবজাতীকে তিনি আল্লাহর দিকে আহবান জানাবেন কিন্তু সন্তোষজনক সাড়া পাওয়া যাবে না-গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ)সহজে খোদা প্রাপ্তির পথ (বিশেষ করে সপ্ত কর্ম পদ্বতি) দেখায়ে গেছে কিন্ত এখনো ও সন্তোষজনক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না (৫) তার ও সেই যুগের মুমিনদের তিরোধনের পর মানব স্বভাব চতুষ্পদ জন্তুর স্বভাবে পরিনত হবে- পেপার পত্রিকা ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখলে ও পড়লে বুঝা যাবে যে বর্তমান সময়ে মানুষের চরিত্র কোথায় গেছে। (৬) হালাল হারাম পরিচয় করবে না- বর্তমান সময়ে ব্যাংকিং সিস্টাম থেকে শুরু করে বেশির ভাগ জায়গা এখন সুদ/হারাম দেখা যাচ্ছে। এটা গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ)এর কালাম থেকে সহজে বুঝা যায়। তিনি বলেনঃ কবুতরের মত বাছিয়া খাও। (৭) ধর্ম ও বিবেচনা হতে দুরে সরে প্রকৃতি ও প্রবৃতির নির্দেশে কাম স্পৃহা চরিতার্থ করতে মশগুল থাকবে-বর্তমান সময়ে পৃথিবীতে যে ভাবে অবৈধ যৌন কার্যকলাপ শুরু হয়েছে যা আইমে জাহেলিয়াত যুগের পর্যায়ে পৌছে গেছে।
ইবনুল আরাবী (রঃ) আরো বলেনঃ কামালিয়তের কোন প্রশংসা তার বুজর্গিতে বাদ পড়ে না, যদিও তার এই গূনাবলী বর্হিদৃষ্টিতে বা শরআ মতে ভাল বা মন্দ। এই সর্ববেষ্টনকারী বেলায়ত ‘’ আল্লাহ’’ নাম বিশিষ্ট নামধারী অলীউল্লাহর জন্য নিদির্ষ্ট (ফছুছু ১১১ পৃঃ)।
গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ)'র পিতা রাসুল করিম (দঃ) কর্তৃক স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে আল্লাহ ও রাসুল করিম (দঃ) এর সমন্বয় নাম বিশিষ্ট তার নাম আহমদ উল্লাহ (উল্লাহ অর্থ আল্লাহ) রাখেন। যা ইবনুল আরাবী (রঃ) উপরোক্ত কালামের সাথে মিলে যায়। তার প্রতিষ্ঠিত মাইজভান্ডার শরিফের আধ্যাক্তিক কর্মকান্ড বা গূনাবলী বর্হিদৃষ্টিতে বা শরআ মতে এখনও অনেক আলেম ওলামার কাছে ভাল বা মন্দ, যা পৃথিবীতে অন্য কোন ওলী আল্লার ব্যপারে দেখা যায়নি। বিশ্ব বিখ্যাত আউলিয়া শায়খ মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী (রঃ) তার বিখ্যাত গ্রন্থ ফছুছুল হেকম কিতাবে আরো লিখেছেন ˝মানব জাতীর মধ্যে হযরত শীস (আঃ) এর অনুসারী ও তার ভেদাভেদের ধারক ও বাহক এক ছেলে ভুমিষ্ট হবেন। তার পরে এইরূপ মর্যাদা সম্পন্ন কোন ছেলে জন্ম গ্রহন করবেনা। তিনি খাতেমুল অলদ হবেন˝।। [সংগ্রহঃ গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারীর জীবনী ও কেরামত]
হজরত শায়খ মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী (রঃ) বর্ণানায় নিশ্চিতভাবে বলা যায় প্রথম খাতেমুল অলদ গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ)। যা অসংখ্য আউলিয়া কেরাম তাদের বিভিন্ন কিতাবে তাদের লেখনীর মাধ্যমে বর্ণনা করেন। ইবনুল আরাবী (রঃ) খাতেমুল অলদ গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী(কঃ) সম্পর্কে তার বিখ্যাত গ্রন্থ ফছুছুল হেকমে তার শান মান সম্পর্কে বলেনঃ থাতেমুল আউলিয়া রসুলুল্লার অলীয়ে ওয়ারেছ হন। খাতেমুল আউলিয়া রসুলুল্লার বিভিন্নরূপের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম রূপ’’ [ফছুছু ১১১ পৃঃ], খাতেমুল আউলিয়া ইসলামী ইমারত বা দেওয়ালের শেষ ইট বা গাঁথুনী, যার দ্বারা ইসলামী ইমারত পূর্ণতাপ্রাপ্ত হবে [ফছুছু-৯২ পৃঃ] ৫৯৫ হিজরী সনে আমার সংগে তার সাক্ষাত হয়। তার শরীরস্থ বেলায়তের চিহ্ন তিনি আমাকে দেখান। তার খোদায়ী রহস্যপূর্ণ বাণী সাধারন লোকেরা স্বীকার করবে না, যদিও তার খাতেমে বেলায়তের (পূর্ব যুগের সমাপ্তকারি) চিহ্ন সাধারন লোকচক্ষুর অন্তরালে তথাপি আমার জামানাতেও তিনি বিদ্যমান আছেন" [ফছুছু-৯৩ পৃঃ] গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (কঃ) অসংখ্য কারামত প্রকাশ করেছিলেন তার কারামত এর মধ্যে বিশেষভাবে লহ্ম্যণীয় হচ্ছে তার ফয়েজ বরকতের মাধ্যমে অসংখ্য আউলিয়া সৃষ্টি করা, তার খলিফাদের মধ্যে অসংখ্য আউলিয়া ছিলেন, বাংলাদেশে এমন কোন অঞ্চল নাই তার খলিফা নাই, বাংলাদেশ ছাড়াও বার্মা , ভারত, পাকিস্থান সহ বিভিন্ন দেশে তার খলিফা ও তাদের মাজার দেখা যায়।গাউসুল আ'যম হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (কঃ) ও গাউসুল আ'যম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ) সময়ের অনেক আলেম ওলামা তাদেরকে চিনতে পারে নাই এবং বর্তমানেই অনেকেই তাদের গাউসুল আজমিয়তের স্বীকৃতি দেয় না বা অঞ্চল একালার মধ্যে গাউসিয়তের বাউন্ডারি করে দেয় ( যেমনঃ মাশরেকি গাউসুল আ'যম,মাগরিবি গাউসুল আ'যম ইত্যাদি) ,যা ঐ আলেম ওলামাদের আধ্যাক্তিক জ্ঞানের অভাবে হচ্ছে। গাউসুল আ'যম হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (কঃ) এর কালামকে অসম্মান করার কারণ্বে অলীয়ে কামেল শায়খ সানাআলীর বেলায়ত চুত্যি ঘটেছিল, অনুরূপভাবে গাউসুল আ'যম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ) কে অসম্মান করার কারণে শাহানগর নিবাসী প্রখ্যাত আউলিয়া বাহারুল্লা শাহ এর বেলায়ত চুত্যি ঘটেছিল [বাহাজাতুল আসরার ও আয়নায়ে বারী ]। আল্লাহ তা'য়ালা আমাদেরকে তাজধারি দুই গাউসুল আ'যম এবং উনাদের আওলাদ,এছাড়া আল্লাহ তা'য়ালার সকল আউলিয়া দেরকে যথাযত সম্মান করার তওফিক দান করূক আমিন।

দুই গাউসুল আ'যম (পর্বঃ ২)

হজরত মওলানা আমিনুল হক ফরহাদাবাদী (রঃ) অলীয়ে কামেল ও ইসলামী বিধান শাস্ত্র বিশারদ মুফতি ছিলেন। তাহার ফতোয়া সুদুর মিশর দেশে জামেউল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের
আলেমগণ কতৃক প্রশংসিত হয়েছিল। মওলানা সৈয়দ আবদুল হামিদ বাগদাদী ছাহেব (রঃ) কাবা শরীফের বারান্দায় উপস্থিত আরববাসীদিগকে তার পরিচয় দিতে গিয়া তার ডান হাত ধরে বলেছিলেন, এই সরূ হাতগুলি হাড়ের নহে; হীরার বলা যেতে পারে। তার লিখার মধ্যে হীরার ধার আছে। বাংলার মুল্লুকে এইরূপ লায়েক আলেম আমি দেখিনি। হজরত মওলানা আমিনুল হক ফরহাদাবাদী (রঃ) কেও আলা হজরত বলা হয়। আলা হজরত আহমদ রেজা খান (রঃ) উনার প্রশাংসা করেছিলেন। আলা হজরত আহমদ রেজা খান (রঃ) বলেনঃ আপনাকে (হজরত মওলানা আমিনুল হক ফরহাদাবাদী) আমার প্রয়োজন। হজরত মওলানা আমিনুল হক ফরহাদাবাদী (রঃ) হযরত গাউছুল আজম শাহছুফী সৈয়দ মওলানা আহমদ উল্লাহ (কঃ) মাইজভাণ্ডারীর খলিফা ছিলেন।
মওলানা সৈয়দ আবদুল করিম মদনীর (রঃ) বলেছিলেনঃ আরব রাজ্য ছাড়া আমি বহুদেশে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত ছায়র করেছি। চট্রগ্রাম আমার শেষ ছায়র। মাইজভাণ্ডারের মৌলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ) ছাহেবের মত জবরদস্ত ওলীউল্লাহ আমি কোথাও পাইনি। শামসুল ওলামা মওলানা জুলফিকার আলী ছাহেব বলেছিলেনঃ (কলিকাতা নিবাসী-যিনি তৎকালীন প্রসিদ্ধ মাদ্রাসা চট্রগ্রাম মোহছেনীয়া মাদ্রাসার ভূতপূর্ব সুপারিন্টেনডেন্ট ছিলেন) গাউসে মাইজভাণ্ডারের নিশ্বাসের বরকতে পূর্বদেশবাসীরা আল্লাহপন্থী ও ছাহেবে হাল জজবার অধিকারী হন, তার মাজারে পাকের বরকতে যে তাছির; মাটিস্থ বুজর্গানের এই দেশীয় কবরের মধ্যে জালালী ও উজ্জ্বলতা বা রওনক এনে দিয়াছেন।
শেরে বাংলা আল্লামা হজরত সৈয়দ আজিজুল হক আল কাদেরী (রঃ) , হযরত গাউসুল আ'যম শাহছুফী সৈয়দ মওলানা আহমদ উল্লাহ (কঃ) শানে ফার্সী ভাষায় লেখা তার নজরে আকিদত শীর্ষক কছিদায় লিখেছেন, হযরত শাহ আহমদ উল্লাহ কাদেরী মাইজভাণ্ডার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত গাউছুল আজম নামধারী বাদশাহ। তিনি নবীর আহমদী মসরব উম্মতগণের চেরাগে হেদায়ত বা আলোক বর্তিকা। উল্লেখ্য পবিত্র কুরআন শরিফে সূরা নুহ এর ১৬ নং আয়াতে চেরাগকে সূর্য ও সূরা আহযাব এর ৪৬ নং আয়াতে রাসূল (দঃ) কে চেরাগ হিসাবে সম্বোধন করেছিলেন। সুতারাং শেরে বাংলা (রঃ) কালামঃ গাউসুল আ'য, মাইজভাণ্ডারী উম্মতি আহমদির চেরাগ দ্বারা মহিউদ্দিন ইবনে আরবী (রঃ) এর কালামঃ (তিনি রসুল (দঃ) জমায়াতের ইমাম হন এবং শাফায়াতের দরজার উন্মোচনকারী হিসাবে আদম সন্তানের সর্দার হন) সাথে মিলে যার। তাদের এই কালাম গুলি হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারীর কালামঃ ˝হাশরর মাঠে প্রথম আমিই বলিব লা ইলাহা˝ কালামের অন্তনিহিত অর্থের সাথে মিলে যায়। শেরে বাংলা আল্লামা হজরত সৈয়দ আজিজুল হক আল কাদেরী (রঃ) আরো বলেনঃ রসুলুল্লাহ (দঃ) এর নিকট বেলায়তে ওজমা বা শ্রেষ্ট বেলায়তের দুইটি সম্মান প্রতীক বা তাজ ছিল, এই তাজ দুইটির মধ্যে একটি হযরত গাউসুল আ'যম শাহ আহমদ উল্লাহ (কঃ) এর মস্তক মোবারকে নিশ্চিতভাবে প্রতিষ্ঠত, অপরটি জিলান নগরের বাদশা হযরত গাউসুল আ'যম শায়খ সৈয়দ আবদুল কাদের জিলানীর (কঃ) মস্তক মোবারকে প্রতিষ্ঠিত˝। আল্লামা শেরে বাংলা (রঃ) এর কালামটি হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (কঃ) এর নিম্মে লিখিত পবিত্র কালামের সাথে মিলে যায়ঃ রাসূলুল্লাহ (দঃ) গাউসুল আজমিয়তের দুই তাজের (টুপি) একটি আমার মাথায় এবং অপরটি আমার ভাই বড় পীর সাহেবের মাথায় দিয়েছেন।
মিশরের আল আজহার বিশ্ব বিদ্যালয়ের এর রেকটর সাহেব মরহুম ব্যারিষ্টার বজলুস সত্তারকে বলেনঃ ˝You are lucky, you have come from the birth place of Gausul Azam Hazrat Ahmedullah Maizbhandari’’
প্রখ্যাত পীরে কামেল হযরত আল্লামা সৈয়দ আহমদ ছিরিকোটি (রঃ) ছাহেব হযরত গাউছুল আজম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ) সমন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বলেনঃ ˝উনকা বারে মে মত পুছ বেটা, আগর না কুছ বেয়াদবী হো যায়ে। মশরেকী মুলকমে এতনা বড়া হাস্তি আওর নেহি আয়া˝- তার সমন্ধে জিজ্ঞাসা করোনা,হয়তো বেয়াদবী হয়ে যাবে। পূর্বাঞ্চলে (জম্মসুত্রে স্থানের দিকে নিসবত ) তার মত এত বড় অলি আর আসেনি। হযরত আল্লামা সৈয়দ আহমদ ছিরিকোটি (রঃ) ছাহেব এর কালাম দ্বারা উল্লেখিত হযরত ওমর (র) ভবিষ্যত বানী পূর্বাঞ্চলের বা প্রাচ্যদেশীয় রাজকীয় দূতের সাথে মিলে যায়।হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ও হযরত গাউসুল আ'যম শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (কঃ) নিন্মলিখিত কালাম দ্বারা বুঝায় যে দুই জনই ঘনিষ্ট বন্ধু এবং গাউসুল আ'যম ।
হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভাণ্ডারী (কঃ)বলেনঃ আমার নাম পীরানে পীর ছাহবের নামের সাথে সোনালী অক্ষরে লিখা আছে। আমি এবং আমার ভাই বড় পীর সাহেব একদা কাবা শরিফে ঢুকে রাসূলুল্লাহ (দঃ) ছদর মোবারকে (বহ্মস্থল) ডুব দিলাম, দেখলাম সেটা এক অনন্ত দরিয়া। রাসূলুল্লাহ (দঃ) শ্রেষ্ঠ বেলায়েতের দুইটি তাজের (টুপি) মধ্যে একটি আমার মাথায় এবং অপরটি আমার ভাই বড় পীর সাহেবের মাথায় দিয়েছেন। [হজরত কেবলার জীবনী গ্রন্থ ও বেলায়তে মোতালাকা]
হযরত গাউসুল আ'যম পীরেনে পীর দস্তগীর (কঃ) বলেনঃ আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধু আছে ( বাহযাতুল আসরার >ক্ষমতা প্রয়োগে সক্ষম অংশে)। হযরত গাউসুল আ'যম পীরেনে পীর দস্তগীর (কঃ)বলেনঃ আল্লাহর অনেক ওলী আছেন। কিন্তূ শ্রেষ্ট ওলীর সংখ্যা খুবই কম, তারা সংখ্যায় মাত্র দুই একজন অনন্য সকলে তাদের খেদমতে হাজির হন এবং তাদের নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন। তাদের বরকতেই আল্লাহ যমীনে ফসল দান করেন, আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং মানুষের বালা মুছিবত দুর করেন (ফতহুর রব্বানী)। হজরত পীরেনে পীর দস্তগীর (কঃ) কালাম দ্বারা আরো একজন সর্বশেষ্ট ওলী বা গাউছুল আযমের অস্তিত্বের প্রমান পাওয়া যায়। তারা উভয়ই গাউছুল আজাম হওয়ার দাবি করেছেন। গাউছে ধন জগতের সুলতান হযরত পীরেনে পীরের পদে পদমান। গাউছে ধন জগতের সুলতান। কালামটি লিখেছেন বিখ্যাত ওলীআল্লাহ হযরত মওলানা বজলুল করিম মন্দাকিনী (রঃ)।হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী (কঃ) তার পবিত্র জবানে কালাম করেন,
"আমার কাছে যে কেউ যাহায্য প্রার্থনা করবে আমি তাকে উন্মুক্ত সাহায্য করব, আমার এই সরকারের ধারা হাশর পর্যন্ত জারি থাকবে।" [হজরত কেবলার জীবনী গ্রন্থ]
হজরত কেবলার পবিত্র এই কালাম, তার গাউসুল আ'যম হওয়ার অন্যতম একটা স্বীকারুক্তি। তিনি তার সাহায্যের কোনো সীমা টানেননি, সাহায্য প্রার্থীর ক্ষেত্রেও না সাহায্যের ধরনের ক্ষেত্রেও না। যে কেউ হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী (কঃ) কাছে সাহায্য চাইতে পারবেন এবং তিনি উন্মুক্ত সাহায্য করবেন। হজরত কেবলার সাহায্যের এই প্রকৃতি হাশর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এমন কালাম আল্লাহর জমিনের বুকে কোনো আল্লার ওলি করেননি একমাত্র হযরত গাউসুল আ'যম আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) ব্যতিত। দুই জাহানের মধ্যে সমান ভাবে সাহায্যকারী তিনি। সেই শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী যিনি দুনিয়া এবং আখেরাত উভয় স্থানে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখেন। এটি এমন এক বিরল ক্ষমতা যা তিনি আল্লাহ ও তার রাসুলে পাক (দঃ) এর তরফ থেকে পেয়েছেন। গাউসুল আ'যম শব্দের একটা অর্থ হচ্ছে শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী বা শ্রেষ্ঠ ত্রাণকারী, যা হজরত কেবলায়ে আলম খাতেমুল অলদ সৈয়েদেনা হযরত গাউসুল আ'যম শাহ্সুফী মাওলানা আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারীর (কঃ) জন্যে অত্যন্ত উপযুক্ত।
হযরত গাউসুল আ'যম শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (কঃ) কালামঃ আমার কদম সকল ওলী আল্লাহর গর্দানের উপর। এই কালামটির সূত্র ধরে বর্তমান যুগের কিছু আলেমদের অ্ন্যান্য বিখ্যাত ওলী আল্লাদের খাটো করার প্রবনতা দেখা যাচ্ছে। সীরতে গাউসুল আ'যম গ্রন্থের প্রণেতা, তাযকিরায়ে গাউসুল আ'যম , ফুতুহাতে মক্কিয়া ,শরহে ফতুহুল গাইব,, বড় পীর সাহেবে জীবনী এবং অন্যান্য বিখ্যাত ওলীআল্লাদের কালাম অনুসারে দেখা যায় যে পীরেনে পীর দস্তগীর (কঃ) উল্লেখিত কালামটি তৎকালীন যুগের ওলী আল্লাদের প্রতিই প্রযোজ্য। এই বিষয়ে নিম্নে কিছু রেফারেন্স দেওয়া হলঃ
সীরতে গাউসে আ'যম গ্রন্থের প্রণেতার বলে এবং মাকতুবাত শরিফের ২৯৩ মাকতুবেঃ হযরত গাউসুল আ'যম বড় পীর (রঃ) পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকল আউলিয়াগণকেই হযরত বড় পীর সাহেবের অনুসারী কেউ কেউ এই হুকুমের মধ্যে শামিল করতেন। কিন্ত ইহা মেনা নেওয়া যায় না। ইহা পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী আউলিয়াগণ সম্পর্কে ছিলনা। বরং বড়পীর সাহেবের জামানার অলি উল্লাগনের সম্পর্কে বলা হয়েছিল। কারন পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী আউলিয়াগণের মধ্যে চার খলিফা ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম শামিল রয়েছেন।তাদের ফজিলত সকল আউলিয়াগণের উপরে বলে হাদিস দ্বারা প্রমানিত আছে। পরবর্তী সকল আউলিয়াগণ সম্পর্কেও এই উক্তি প্রযুক্ত হতে পারে না। কেননা, হযরত ইমাম মাহদি (আঃ) পরবর্তী আউলিয়াগণের মধ্যে শামিল রয়েছেন।
৬৩০ হিজরীতে বাগদাদে আমাদের শেখ আবু ননজীব আবদুল কাদির সহরওয়ার্দী সংবাদ দিলেন যে ৫০৩ হিজরিতে আমি শেখ হাম্মাদ বিন দব্বাস (রঃ) নিকট ছিলাম। শেখ আবদুল কাদির (রঃ) ঐ দিন তার সহবতে আসেন। তখন তিনি আসলেন এবং তার সামনে আদব সহ বসে গেলেন। অতঃপর শেখ দাঁড়িয়ে গেলেন। শেখ আবদুল কাদের (রঃ) দাড়ানোর পর আমি শেখ হাম্মাদ (রঃ) কে বলতে শুনলাম ˝ এ অনারবীর কদম এমন যে স্বীয় যুগে অলিদের গর্দানের ওপর বুলন্দ হবে, সে আদিষ্ট হবে যে, আমার এ কদম সকল আউলিয়া আল্লাহর গর্দানের ওপর বলতে, তিনি অবশ্য তা বলবেন এবং এ সময়ের আউলিয়াদের গর্দান তার জন্য অবশ্যই ঝুকবে। তাযকিরায়ে গাউছুল আজম গ্রন্থের পৃঃ ১০। এখানে তিনি উল্লেখ করছেনঃ স্বীয় যুগে অলিদের গর্দানের ওপর বুলন্দ হবে। শেখ আবু বকর বিন হাওয়ার (রঃ) একাদা মজলিসে আপন সাথীদের মাঝে আউলিয়াদের অবস্থার কথা বলেন অতঃপর বলেন, অচিরেই ইরাকে এক আজমী বা অনারবী মর্দে-খোদা অনন্য লোকদের নিকট উচ্চ মর্যাদা সম্পর্ন হবেন। তার নাম আবদুল কাদের, বাসস্থান ইরাকে হবেন। তিনি বলবেন আমার এ কদম সকল আউলিয়ার গর্দানের উপর তার যুগের সকল আউলিয়াগণ তার কথা মেনে নিবেন। তিনি আপন যুগের একক ব্যক্তিত্ব তথা অদ্বিতীয়। তাযকিরায়ে গাউছুল আজম গ্রন্থের পৃঃ ৬। এখানেও তার যুগের বা আপন যুগের কথা বলেছিলেন।

দুই গাউসুল আ'যম (পর্বঃ ১)

পৃথিবীতে প্রকাশ্য দুই জন গাউসুল আ'যম দেখা যায়, বেলায়তে মোকাইয়্যাদায়ের যুগে গাউসুল আ'যম হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (কঃ) এবং বেলায়তে মোতলাকার যুগে গাউসুল আ'যম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ)।
হযরত ঈসা (আঃ) হতে হযরত মুহাম্মদ (দঃ),গাউসুল আ'যম হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (কঃ),গাউসুল আ'যম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ) পর্যন্ত ৬০০ বছরের একটা দাইরা বৃত্ত পাওয়া যায় ৬০০x৩= ১৮০০ বছর।হযরত ঈসা (আঃ)এর জন্ম (০১) প্রথম খৃষ্টাব্দে এবং গাউসুল আ'যম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ) এর জন্ম ১৮২৬ খৃষ্টাব্দে।কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসার অবসর প্রাপ্ত মোদাররেছ কুতুবে জমান হজরত মওলানা শাহছুফী ছফী উল্লাহ (রঃ)জজবা হালতে এক ব্যক্তিকে গাউসুল আ'যম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী(কঃ)সম্পর্কে বলতে লাগলেন, ˝ মিয়া চিন! কিরূপ চিন? ছয়শত বছরের মধ্যে এইরূপ অলীউল্লাহ পৃথিবীতে আসেননি˝ [তথ্যসূত্রঃ বেলায়তে মোতলাকা}উল্লেখিত বাণী হতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে ইহা ৬০০x৩ বছরের একটা দাইরা বৃত্ত। এই দায়রা বৃত্তটি পর্যায়ক্রমেঃ হযরত ঈসা (আঃ) এর জন্ম (০১) প্রথম খৃষ্টাব্দে হতে →হযরত মুহাম্মদ (দঃ)→গাউসুল আ'যম হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (কঃ)→গাউসুল আ'যম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ) এর জন্ম ১৮২৬ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত মোট ১৮০০ বছরের একটা দাইরা বৃত্ত।
হযরত মওলানা জালাল উদ্দিন রূমি (রঃ) বলেনঃ প্রত্যেক বৃত্তের জগতের আবর্তন-বিবর্তনের যুগে একজন বিশিষ্ট ওলী থাকবেন যার পরীহ্মা নিরীহ্মা কেয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবেন। [মসনবি শরীফ]
গাউসুল আ'যম হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (কঃ)’র নামে পবিত্র কুরআন শরিফ ও হাদিস শরিফে কোন স্পষ্ট আয়াত নাই অনুরুপভাবে গাউসুল আ'যম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ) নামে কোন স্পষ্ট আয়াত নাই, কারন ভবিষ্যত (গায়েব) সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরিফ ও হাদিস শরিফে আয়াতের সংখ্যা খুবই কম। কিন্ত আধ্যাক্তিকভাবে অনেক আয়াত আছে।সাহাবী/তাবেয়ীদীনদের অথবা তাদের পরবর্তি যুগে দুই তিনটা রেফেরেন্স আছে এই রেফেরেন্সগুলিতে উল্লেখিত দুই গাউসুল আ'যম ঈঙ্গিত পাওয়া যায়। যেমনঃ হজরত মুহাম্মদ (দঃ)’র আব্বাজান স্বপ্নে দেখেছিলেনঃ মুহাম্মদী নূর শক্তি দুই ভাগে বিভক্ত হবে, এক ভাগ আরবে প্রকাশ হয়ে সারা বিশ্বভুবন আলোকিত করবে, অপর ভাগ মূলকে আজমে এশিয়ার পূর্বে অঞ্চলে উদিত হয়ে নিখিল ধরণীর অন্ধকার দুরীভুত করবে। (মওলুদে দিল পজির)। আমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারি এশিয়ার পূর্বে অঞ্চলে রাসুল (দঃ) এর সর্বশেষ্ট রূপ ও আওলাদ গাউসুল আ'যম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ) জন্ম বা উদিত হয়। মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী (রঃ) তার ফছুছুল হেকম কিতাবে বলেনঃ খাতেমুল আউলিয়া রসুলুল্লাহের বিভিন্নরূপের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম রূপ’’ খাতেমুল আউলিয়ার বর্ণানা অনুসারে গাউসুল আ'যম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ) হলেন প্রথম খাতেমুল আউলিয়া। হযরত জালালুদ্দীন সয়ুতি (রঃ) এর খাসায়েসুল কুবরা ২য় খন্ড থেকে সংগৃহীতঃ হযরত মুগীরা ইবনে শোবা রেওয়ায়েত করেন- হযরত ওমর ফারুক (রঃ) আমাকে বলেছেন আল্লাহর কসম! বনু উমাইয়া ইসলামকে বধির করে দিবে, এরপর অন্ধ করে দিবে, এরপর জানা যাবে না ইসলাম কোথায় আছে এবং ইসলামের শাসন কর্তা কে, তখন ইসলাম এখানে ওখানে থাকবে। এই অবস্থা ১৩৬ বৎসর অব্যাহত থাকবে। এরপর আল্লাহতায়লা একদল দুত প্রেরন করবেন। যারা রাজকীয় দুতের মত হবেন।তাদের সুগন্ধি পবিত্র হবে, তাদের মাধ্যমে আল্লাহতা'য়ালা ইসলামের দৃষ্টি শক্তি ও শ্রবন শক্তি ফিরিয়ে দিবেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এই দূত কারা, হযরত ওমর বললেন ˝তারা হলেন ইরাকী,আজমী ও প্রাচ্যদেশীয়।˝
সহজে বলতে পারি যে ইরাকী হলেন -গাউসুল আ'যম হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (কঃ), আজমী হলেন-কুতুবুল আকতাব হজরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতী (কঃ)এবং প্রাচ্যদেশীয় হলেন- গাউসুল আ'যম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ) এবং বাহরে ছানী গাউসুল আযম সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবা ভান্ডারি (কঃ)।
বাহারুল উলুম মওলানা আবদুল গনি কাঞ্চনপুরী (রঃ) লিখিত আয়নায়ে বারী কেতাবের ১৫১ পৃঃ উল্লেখিত আছেঃ হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মুজতাবা (দঃ) নবীদের মধ্যে সর্বশেষ নবী এবং রেসালত প্রাপ্ত নবীদের বাদশাহ ছিলেন। সেইরূপ হযরত গাউসুল আ'যম শাহছুফী সৈয়দ মওলানা আহমদ উল্লাহ (কঃ) বেলায়তের মোকাইয়্যাদা যুগের খাতেম বা পরিণতিকারী। তিনি আউলিয়াদের বাদশা এবং দোজাহানের গাউসুল আ'যম এবং হযরত রসুলে খোদা (দঃ) এর বেলায়তের উত্তরাধিকারী হন। আয়নায়ে বারী কেতাবের ১৩৮ পৃঃ আছেঃ ˝অলিদের শিরোমণি খোদার গাউছ ভবে পদার্পণ করেছেন। জগদ্বাসীর প্রাণপ্রিয়, ছুফীদের লক্ষ্যস্থল ইমাম ভবে তশরীফ এনেছেন˝। আয়নায়ে বারী কেতাবের ১৪০ পৃঃ আছেঃ ˝ মহা প্রভুর আসন রবি (সূর্য) উদিত হয়েছে, মানব আকারে খোদার গোপন রহস্য প্রকাশ পেয়েছেন˝
মওলানা আবদুল গনি কাঞ্চনপুরী (রঃ) কে তার সমসাময়িক আলেম ও ওলীউল্লাহরা জ্ঞানের সাগর হিসেবে অভিহিত করতেন। আত তাওজিহাতুল বহিয়া নামক কিতাবে অলীয়ে কামেল হজরত মওলানা আমিনুল হক ফরহাদাবাদী (রঃ) লিখেছেনঃ (তার) হযরত গাউসুল আ'যম শাহছুফী সৈয়দ মওলানা আহমদ উল্লাহ (কঃ) গুনাবলী আল্লাহতা'য়ালার গুনাবলী হতে অর্জিত। তিনি আল্লাহতা'য়ালার সৃষ্টি কুলে দেশ সমূহে গাউসুল আ'যম রূপে নিয়োজিত। গাউসুল আ'যমের অনুগ্রহের ছায়ায় আল্লাহতা'য়ালা আমাদের-কে স্থান দান করূন।আমিন

মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের শরাফতের উল্লেখযোগ্য দিকসমূহ ও অছি-এ গাউসুল আ'যম এর অবদান: পর্ব ৪ (শেষ)

(ঠ) রাজনীতি নিরপেক্ষতা বা অরাজনৈতিক শরাফত (Political Neutrality)
মাইজভান্ডার দরবার শরীফ রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থেকে মুক্ত। কোন প্রকার দলীয় রাজনীতি কিংবা রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় মাইজভান্ডার দরবার শরীফের কর্মকান্ড আবর্তিত হয় না। মাইজভান্ডার দরবার শরীফের সকল কর্মকান্ড আবর্তিত হয় মহান স্রষ্টা কর্তৃক নির্দেশিত এবং নবী করিম (দঃ) কর্তৃক প্রদর্শিত ও হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী (কঃ)-এর জীবন ধারায় প্রতিফলিত পথে। অছি-এ-গাউসুল আ'যমের জীবনধারায় এ নীতির পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন ছিল।
(ড) জ্ঞান-চর্চা বা শিক্ষামূলক শরাফত (Knowledge and Education)
জ্ঞান-চর্চা মাইজভান্ডারী শরাফতের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। হাদিস শরীফে আছে-
“বিজ্ঞান ও জ্ঞানের তথ্যাদি ঘন্টা-খানেক শ্রবণ করা এক হাজার শহীদের জানাজা থেকেও অধিকতর পূণ্যের, এক হাজার রাত্রিতে নামাজে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়েও পূন্যতর”।
নবী করিম (দঃ) বলেছেন,
“জ্ঞান অর্জন করো; জ্ঞান তোমাকে মন্দের মাঝে ভালোর সঙ্গে পরিচিত করে তুলবে। জ্ঞান স্বর্গীয় আনন্দ দেবে। মরুভূমিতে জ্ঞান তোমাদের বন্ধু, নির্জনতায় তোমাদের সঙ্গী, পরিত্যক্ত অবস্থায় সে নির্ভরযোগ্য সহচর। জ্ঞান দুঃখে শান্তনাদাতা, সুখের দিক-নির্দেশক বন্ধু, জন সমাগমে অলংকার ও শত্রুর বিরুদ্ধে বর্ম। সুতরাং দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণ কর। কারণ যে জ্ঞান অন্বেষণ করে, তার অতীতের কৃত পাপ মোচন হয়ে যায়”।
মহান আল্লাহতালার নিকট থেকে ওহী মারফত রসূল (দঃ)-এর প্রতি নাযিলকৃত প্রথম বাণী হচ্ছে “পড়ুন” অর্থাৎ শিক্ষা লাভ করুন। ইহা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, জ্ঞান চর্চা মানুষের জন্য অপরিহার্য। মার্জিত রুচি, পরিচ্ছন্ন ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা, আদর্শ রাষ্ট্র গঠন, অসৎ ও অসামাজিক কার্যাবলী বর্জন, ব্যক্তি চরিত্রের পুনর্গঠন, স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়, দায়িত্ব ও কর্তব্য পরায়ণতা সম্পর্কে সচেতনতা, ইহকালের কল্যাণ ও পরকালে পরিত্রাণ লাভ, চরিত্র গঠন প্রভৃতির জন্য জ্ঞানচর্চা মানুষের অপরিহার্য। ধর্মীয় জ্ঞানহীনতার কারণেই আজ প্রায় অঞ্চলে দুর্ণীতির বন্যা ও চরিত্রহীনতার করাল গ্রাস জনজীবনকে অতীষ্ট করে তুলেছে। সত্যিকার ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবে আজ আমরা হারামকে বলি লাভ, ঘুষকে বলি বখশিষ, অন্যায়কে বলি সুবিচার, জুয়াকে বলি লটারী। মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফত তাই জ্ঞানচর্চার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে।
অছি-এ-গাউসুল আ'যম ছিলেন জ্ঞানচর্চার অগ্রনায়ক। মাইজভান্ডার দরবার শরীফের অন্য কোন অলী বা ব্যক্তিত্ব তাঁর মত এত বেশী জ্ঞান চর্চা করেছেন বলে আমার জানা নেই। তিনি ছিলেন একাধারে গবেষক, সাহিত্যিক সমালোচক ও উঁচুদরের লেখক। তিনিই মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফতের বিভিন্ন দিক লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ করেন এবং পাঠক সমাজের কাছে তুলে ধরেন।তার লেখনি সমূহের মাধ্যমে মাইজভান্ডারী ছুফি মতাদর্শ, ইতিহাস ও রীতিনীতি সর্ব প্রথম বাংলা ভাষায় একটি প্রাতিষ্ঠানিক পরিশীলিত রুপরেখা লাভ করে। ফলত পরবর্তীকালে বিশ্বের নানা প্রান্তে এ তরীকা সংক্রান্ত গবেষণায় তার লেখা সমূহ মৌলিক উপাদান হিসাবে গুরুত্ব পায় কেননা, তদ্বপূর্ব অপরাপর লেখকগণের বেশির ভাগ লেখা সমূহ ছিল আরবী ও উর্দূ ভাষায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মাইজভান্ডারী তরীকার স্বরুপ বিশ্লেষনাত্মক কতিপয় গবেষণা গ্রন্থ ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে যথাক্রমে বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে অত্র তরীকার ১ কোটি বা ১০ মিলিয়নেরও বেশি প্রত্যক্ষ অনুসারী রয়েছে বলে উল্লেখ করা অষ্ট্রেলিয়ার মাইগ্রেশন রিভিউ ট্রাইবিউন্যাল (এমআরটি) এবং রিফিউজি রিভিউ ট্রাইবিউন্যালের (আরআরটি) গবেষণা প্রবন্ধ বাংলাদেশ- মাইজভান্ডারী সম্প্রদায়- ছুফিবাদ- ধর্মীয় মৌলবাদ, আমেরিকার ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক পিটার জে. র্ব্যাটচ্চি রচিত এ্যা ছুফি মুভমেন্ট ইন বাংলাদেশ: মাইজভান্ডারী তরীকা এন্ড ইটস্ ফলোয়ার্, জার্মানীর হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেনস্ হার্ডার বিরচিত ছুফিজম এন্ড সেইন্ট ভ্যানারেশান ইন কন্টেম্পরারী বাংলাদেশ অব চিটাগং (রাউটল্যাজ এ্যাডভান্স ইন সাউথ এশিয়ান ষ্ট্যাডিজ্) এবং বাংলা একাডেমীর প্রাক্তন ও ফিনল্যান্ডের ফিনিশ এ্যাকাডেমীর বর্তমান গবেষক ড. সেলিম জাহাঙ্গীরের পি এইচ ডি গ্রন্থ মাইজভান্ডারী সনদর্শন বিশেষ ভাবে প্রধানযোগ্য।তাঁর লিখিত বিখ্যাত দশটি বইয়ের মধ্যে মাইজভান্ডারী তরীকার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বিরচিত বেলায়তে মোত্‌লাকা গ্রন্থটির ইংরেজী অনুবাদ সম্পাদিত হয়েছে। এছাড়া তার অপরাপর নয়টি গ্রন্থ যথাক্রমে: গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর জীবনী ও কেরামত,গঠনতন্ত্রপ্রতিবাদ লিপি,এলাকার রেনেসাঁ যুগের একটি দিক,বিশ্ব মানবতায় বেলায়তের স্বরূপ,মানব সভ্যতা,মিলাদে নববী ও তাওয়াল্লোদে গাউসিয়া,মুসলিম আচার ধর্ম,মূল তত্ত্ব বা তজকীয়ায়ে মোখতাছার- ১ম খন্ড
মাইজভান্ডারী দর্শনের বিকাশের ক্ষেত্রে তাঁর এ অবদার চির ভাস্বর হয়ে থাকবে।
(ঢ) কলূষমুক্ত সঙ্গীত বা স্বর্গীয় সুরের শরাফত (Divine Melody)
মাইজভান্ডার দরবার শরীফে স্বর্গীয়সুরের মূর্চ্ছনায় ও ছন্দের বাজনার তালে তালে আধ্যাত্মিক সঙ্গীত গেয়ে খোদার ভাবে বিভোর হয়ে নৃত্যের মাধ্যমে জিকির করার রেয়াজ আছে। কিন্তু বাদ্যযন্ত্রসহ গান গেয়ে নেচে নেচে জিকির করতে হবে এমন কোন কথা নেই। ইহা মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফতের অপরিহার্য অঙ্গ নয়, প্রয়োজনীয় শর্তও নয়। যুগ সংস্কারক ওলীয়ে কামেলগণ মানবজাতিকে নানা প্রকার হেকমত প্রয়োগে খোদার প্রতি আহবান করে থাকেন। মহান আল্লাহ বলেন,
“তোমরা দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে বা যে কোন অবস্থায় খোদাকে স্মরণ করো”। (সুরা ইমরানঃ১০৩)
হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী (কঃ) আধুনিক বৈজ্ঞানিক যুগের বিভিন্ন মজাকীয় বৈজ্ঞানিক রুচি সম্পন্ন বিভিন্ন জাতির ও ধর্মের সমাবেশ ও সংমিশ্রণ স্থলে আবির্ভূত মোজাদ্দেদ ওলী বিধায় তিনি আল্লাহ, রাসুল ও ওলীর শানে গান-বাজনা ও গজল গীতিকে স্থান, কাল, পাত্র ভেদে জিকিরী উপাদান বা হুজুরী কলব (একাগ্রচিত্ততা) সৃষ্টির হেকমত বা কৌশল হিসেবে অনুমোদন দিয়েছেন। তবে এরূপ গান-বাজনা শর্ত সাপেক্ষ।নিয়মকানুন মেনে গান বাজনাসহ জিকির করা হচ্ছে মাইজভান্ডার দরবার শরীফের একটি শরাফত। এর অন্যথা মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফতের পরিপন্থী। অছি-এ-গাউসুল আ'যম তাঁর “মিলাদে নবী ও তাওয়াল্লাদে গাউসিয়া” বইতে গান-বাজনাসহ জিকিরের উপরোক্ত নিয়ম কানুন বর্ণনা করে গেছেন। উল্লেখ্য যে, গাউসিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলে গান-বাজনাসহ জিকিরের উপরোক্ত নিয়মকানুন অদ্যাবধি অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়। গান-বাজনাসহ জিকিরের পবিত্রতা রক্ষার ক্ষেত্রে অছি-এ-গাউসুল আযমের এ মহান অবদান প্রশংসনীয়।
(ণ) প্রগতিশীলতা বা প্রগতিশীল শরাফত (Progressiveness)
মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফত সকল প্রকার কুসংস্কার এবং গোঁড়ামীর উর্ধ্বে। একজন কামেল ওলীর সত্যিকার খেদমত ও ছোহবত থেকে যারা বঞ্চিত, তারা বেলায়ত সম্বন্ধে অজ্ঞতার দরুণ মনগড়া কাজকর্ম ও কথাবার্তা বলে থাকে। এরূপ শরীয়ত গর্হিত কাজকর্ম ও কথাবর্তা মাইজভান্ডারী শরাফতের সম্পূর্ণ বিরোধী। মহান আল্লাহ বলেন,
“বহু পবিত্র লোকদের পরবর্তী এ রকম লোকও থাকে যারা নামাজ (জাহের ও বাতেন) পড়ে না বা তর্ক করে এবং কামনার বশবর্তী হয়ে অতি শীঘ্র নরকের নিম্নস্তরে পতিত হয়”। (সূরা – মরিয়ম, আয়াত:৫৯) ।
সমাজে কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোকদের আধিক্যের দরুণ সমাজের সত্যিকার স্বরূপ ক্রমশঃ বিকৃত হতে থাকে। বিশ্ব বরেণ্য মনীষী মহাত্মা বার্ণাড শ’কে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন,
“আমি কোথায় যাব? যাদেরকে লোকে মুসলমান বলে, মুসলমান ও ইসলাম সেরূপ নহে। ইসলামের সত্যিকার ও মৌলিক সমাজ ব্যবস্থা থাকলে আমি নিশ্চয়ই সে সমাজে যেতাম”।
কুসংস্কার মানুষকে নৈতিক দিক দিয়ে পঙ্গু করে দেয় এবং পাপের পথে ঠেলে দেয়।
উদাহরণ স্বরূপ, কোন কোন তথাকথিত মাইজভান্ডারী (নিজেদেরকে মাইজভান্ডার (কঃ)-এর অনুসারী বলে পরিচয় দেয়, অথচ মাইজভান্ডারী (কঃ)-এর কোন আদর্শ তাদের মধ্যে নেই) কে বলতে শুনা যায়, “মাইজভান্ডারে সত্য, মিথ্যা, আচার, ধর্মের বালাই নেই, বাবার প্রতি ভক্তি রাখলেই মুক্তি নিশ্চিত”। নাউজুবিল্লাহ! এরূপ ভন্ড মাইজভান্ডারী, মাইজভান্ডারী শরাফতের শত্রু। তাদের বিরুদ্ধে মাইজভান্ডারী শরাফত একটি প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। কোরআন-হাদীস-সুন্নাহ বহির্ভূত ও বিবেক বর্জিত কোন কিছুর স্থান মাইজভান্ডারী শরাফতে নেই। ব্যাঙের ছাতার মত যত্র-তত্র এবং যার-তার মাজার গৃহ নির্মাণ ও মাইজভান্ডারী শরাফতের পরিপন্থী, মানুষের দৈহিক সুস্থতা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুস্থতা যেমন প্রয়োজনীয় ও মূল্যবাদ, মানসিক সুস্থতা ও দৃষ্টিভঙ্গীর সুস্থতাও তেমনি প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান।
অছি-এ-গাউসুল আযম ছিলেন সকল প্রকার গোঁড়ামীমুক্ত ও প্রগতিশীল। গণ সভ্যতা ও সমাজ জীবনে ধর্মীয় প্রভাবের প্রকৃতি সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান লাভের জন্য ভ্রমন করেন ও বহু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। তিনি বেলায়তের মিরাজহীন কোন লোকের মাজার করার বিরুদ্ধে মত পোষণ করেন। তিনি ভক্তের বাড়ী বাড়ী গিয়ে মুরীদ বানানো ও নজরানা নেয়ার কাজকে ঘৃণা করতেন। তিনি গাউসিয়ত নীতি (তেলাওয়াতে অজুদ,অনর্থ পরিহার ও সন্তোষ বিরুধি যার বর্ণনা মানবসভ্যতা বইয়ে বিস্তর ভাবে উল্লেখ করেছেন) বিরুদ্ধ ছায়র (সফর করে) পীরি (বাইয়াত) করেননি। তিনি বলতেন পরিস্কার হওয়ার জন্য মানুষ পুকুরের কাছে যায়, পুকুর মানুষের নিকট যায় না। তিনি বলতেন, “যে বালি জল শোষণ করে তাতে কোন উদ্ভিদ জন্মে না”। প্রকৃতপক্ষে, অর্থলিপ্সু পীরের নিকট থেকে মুরীদ মুক্তির দিশা পেতে পারে না। অছি-এ-গাউসুল আ'যম ছিলেন রেছালত ও রসুল করিম (দঃ)-এর পদাঙ্ক অনুসারী এবং গাউসিয়ত নীতির ধারক, বাহক ও পরিপূরক হিসেবে পূর্ণ মানবতা প্রাপ্ত মহান ওলী। তিনি ভূয়া পীরি, মুরীদি ও ফকিরীর বিরুদ্ধে কঠোর ও প্রতিবাদ মুখর ছিলেন। উল্লেখ্য, মাইজভান্ডার দরবার শরীফের তাঁর পবিত্র মাজার একমাত্র ব্যতিক্রম হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে আছে এবং মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফতের আসল স্বরূপ ঘোষণা করছে।
তিনি প্রায়শঃ বলতেন, মাইজভান্ডার দরবার শরীফের কোন মাজারের বাহ্যিক শোভা যেন তাঁর মুনিবের (অর্থাৎ হযরত গাউসুল আ'যম মাইজভান্ডারী (কঃ)-এর) মাজারের শোভার চাইতে বেশী না হয়।
মাইজভান্ডার দরবার শরীফের সুরক্ষায় খাদেমুল ফোকরার অবদান পর্যালোচনার মাধ্যমে যে সত্যকে জানতে ও বুঝতে পেরেছি তা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাছে তুলে ধরে সকলকে কুসংস্কার বর্জিত মহাসত্যের দিকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। তিনি গ্রামে ও গঞ্জে 'আঞ্জুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউসে মাইজভান্ডারী' নামে যে সংগঠন ও তৎসংলগ্ন 'জ্ঞানভান্ডার' নামে যে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন উহার মাধ্যমে আমরা এ মহান কাজ সমাধা করতে পারি। এ প্রতিষ্ঠানটির বিকাশে ও সুরক্ষায় আমাদের সকলকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সভা, আলাপ, আলোচনা, পত্র-পত্রিকা, সাময়িকী, গবেষণা ও তাঁর রচিত কেতাবাদির মাধ্যমে মুক্তিকামী মানব সমাজের দোর গোড়ায় মহান সত্যকে পৌছিয়ে দেয়া সম্ভবপর হবে।এছাড়া তিনি ওয়ারিশ পরিচয় দিয়ে গেছেন, আমার পাচ ছেলে (১) সৈয়দ জিয়াউল হক কঃ,(২) সৈয়দ মুনিরুল হক কঃ,(৩)সৈয়দ এমদাদুল হক মঃ,(৪) সৈয়দ ডাঃ দিদারুল হক মঃ(৫) সৈয়দ সহিদুল হক মঃ-শাহজাদা গনই,গাউসুল আযম শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ কঃ মাইজভাণ্ডারী সাহেবের এবং আমার পুত্র বংশধর আওলাদ,অন্য কেহ নহে।প্রথম পুত্র,জিয়াউল হক কে তাঁহার অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মসজিদ পুকুরের উত্তরদিকে আমার নিজস্ব বাগান বাড়িতে পাকা-দালান, "স্যানিটারি ল্যাট্রিন" ইত্যাদির সুব্যবস্থা করে এবং তাঁর প্রাপ্য জমি তুল্য অংশে ভাল-বন্টন করে পৃথক বসবাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।এখন তিনি নিজের অবস্থায় প্রতিষ্টিত।বড় মিয়া সৈয়দ জিয়াউল হক এর ধারাবাহিকতায়,'হাসানবাগ' থেকে হক মঞ্জিল ১৩৮০ বাংলা ৩০ আষাঢ় প্রতিস্টা হয়,সে সাথে গাউসিয়া হক কমিটি প্রতিস্টা করা হয়, আর একই সুত্রে বিশাল প্ল্যাটফর্মে যেমন ( ২১ টির অধিক মাদ্রাসা,১ টি গণ পাঠাগার, হোসাইনি ক্লিনিক,মাইজভাণ্ডারী একাডেমী, মাইজভাণ্ডারী আলোকধারা,মাইজভাণ্ডারী মরমী গোষ্ঠী,মাইজভাণ্ডারী সংগিত নিকেতন,শাহানশাহ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী ক: বৃত্তি তহবিল,যাকাত তহবিল)। উল্লেখ্য প্রথমে ১৯৭৭ সালে ' সৈয়দ হাসান মনজিল' নামে ছিল,পরে ১৯৮৫ সালে 'গাউসিয়া হক মঞ্জিল' নামে পুন:প্রতিস্টা হয়।বর্তমানে সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী কঃ এর একমাত্র পুত্র সৈয়দ হাসান মাইজভাণ্ডারী মঃ সাজ্জাদানশীল হিসেবে 'গাউসিয়া হক মঞ্জিল' এ অবস্থান করতেছেন।অছি-এ-গাউসুল আ'যম এর ২য় পুত্র সৈয়দ মুনিরুল কঃ হক চার্জ মোন্তাজেম,৩য় পুত্র সৈয়দ এমদাদুল হক মঃ সাজ্জাদানশীল ও নায়েবে মোন্তাজেম,৪র্থ পুত্র সৈয়দ ডাঃ দিদারুল হক মঃ ও ৫ম পুত্র সৈয়দ সহিদুল হক মঃ নায়েবে মোন্তাজেম সহ এই চার জন কেই মোন্তাজেম হিসেবে গাউসিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলে অবস্থান করতেছে।উক্ত রূপে মানবসভ্যতা বাস্তবে/কিতাবে তিনি উল্লেখ করে গেছেন। আসুন সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আজ আমরা এ মহান আদর্শ ও প্রেরণায় উদ্ভুদ্ধ হই। তাঁর মহান আদর্শকে বাস্তবায়িত করে তাঁর প্রতি যোগ্য সম্মান প্রদর্শন করি। মাইজভান্ডার দরবার শরীফের মহান শরাফতকে জগৎ ও জীবনে, জীবনধারা ও কর্মপদ্ধতিতে সুপ্রতিষ্ঠিত করি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের এ মহৎ প্রচেষ্টায় সহায় হউন। আমিন।